আরপিও সংশোধন: পোস্টাল ব্যালট বাতিল হবে কখন, গণনা কীভাবে
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের আগে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বেশ কয়েকটি অনুচ্ছেদ পরিবর্তন করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার।
এর মধ্যে দিয়ে ডাকযোগের ব্যালট গণনা, রিটার্নিং কর্মকর্তার ক্ষমতা ও বিচারিক ক্ষমতা সংক্রান্তসহ বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধন করা হয়েছে।
অধ্যাদেশে আরপিওর ২৭ নম্বর অনুচ্ছেদ ১০ নম্বর দফা প্রতিস্থাপন করে ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট বাতিলের জন্য সুনির্দিষ্ট শর্ত যুক্ত করা হয়েছে।
সেইসঙ্গে ৩৭ নম্বর অনুচ্ছেদ সঙ্গে ৩৭ এ উপধারা সংযোজন করে ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট গণনার জন্য বিশেষ প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
পোস্টাল ব্যালট যেসব কারণে বাতিল হবে
কোনো প্রতীকের বিপরীতে টিক বা ক্রস চিহ্ন দেওয়া না হলে।
একের বেশি প্রতীকে টিক বা ক্রস চিহ্ন দেওয়া হলে।
টিক বা ক্রস চিহ্ন এমনভাবে দিলে, যেখানে কোন প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়া হয়েছে তা যুক্তিসঙ্গতভাবে বোঝা না গেলে।
গণনার আগে রিটার্নিং কর্মকর্তার হাতে ডাকযোগে পাঠানো ব্যালট না পৌঁছালে।
আদালতের আদেশে কোনো নির্বাচনী এলাকার প্রার্থীর তালিকায় কোনো পরিবর্তন করা হলে।
ভোটারের পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা দেওয়া না হলে।
ডাকযোগে ব্যালট গণনা প্রক্রিয়া
কেবল ডাকযোগে ব্যালট গণনার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়কে একটি ভোটকেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা ডাকযোগে ব্যালট গণনার জন্য একজন প্রিজাইডিং অফিসার এবং প্রয়োজনীয় সংখ্যক পোলিং অফিসার নিয়োগ করবেন।
প্রিজাইডিং অফিসার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তাদের নির্বাচনী/পোলিং এজেন্টদের উপস্থিতিতে ডাকযোগে ব্যালটের খাম খুলে কমিশন র্ধারিত পদ্ধতি অনুসারে ভোট গণনা করবেন।
গণনা শেষে প্রিজাইডিং অফিসার নির্ধারিত ফরমে একটি প্রমাণীকৃত বিবৃতি তৈরি করে দ্রুত রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেবেন।
রিটার্নিং অফিসার নির্বাচনী এলাকার সমন্বিত ফলাফলের সঙ্গে এই গণনার ফল অন্তর্ভুক্ত করবেন।
ফল ঘোষণার নিয়ম
ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে আরপিওর ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদেও সংশোদনী অনা হয়েছে।
নতুন বিধান অনুযায়ী ফলাফল গণনার পর রিটার্নিং কর্মকর্তা সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটপ্রাপ্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করবেন।
গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রত্যেক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর নাম এবং প্রাপ্ত ভোটের মোট সংখ্যা উল্লেখ থাকতে হবে।
তদন্তে সহায়তা বাধ্যতামূলক
এছাড়া তদন্তে সহায়তার জন্য নতুন বিধান (অনুচ্ছেদ ৮৯ এ) যুক্ত করা হয়েছে আরপিওতে। এর মাধ্যমে নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত তদন্তকারীকে দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনার, স্থানীয় থানার ওসি এবং নির্বাচনি দায়িত্বে নিয়োজিত যে কোনো বাহিনীর কমান্ডার বা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য সহায়তা দেবেন।
যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া সহায়তা দিতে ব্যর্থ হলে, অস্বীকার করলে বা অবহেলা করলে তাকে অদক্ষতা বা অসদাচরণের দায়ে দোষী বলে গণ্য করা হতে পারে।
রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসারও দায়িত্ব পালনের জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেবেন।
বিচার কমিটির হাতে আরো ক্ষমতা
নির্বাচনী তদন্ত ও বিচার কমিটিকে অধ্যাদেশে নতুন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এবারের সংশোধনীতে।
৯১ এ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে নির্বাচনী তদন্ত ও বিচার কমিটিকে নির্দিষ্ট অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচারের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে।
এই কমিটি ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান অনুসারে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।
এই কমিটি কিছু নির্দিষ্ট অপরাধ আমলে নিতে পারবে এবং আইন অনুসারে বিচারের জন্য উপযুক্ত আদালতের কাছে মামলাটি পাঠাতে পারবে।
তদন্তে সহায়তার জন্য ৮৯ এ অনুচ্ছেদের যে বিধান রয়েছে, এই কমিটির ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।
অর্থাৎ, পুলিশ সুপার/পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট বাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্সসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বাধ্য থাকবে এবং ব্যর্থ হলে তা অদক্ষতা বা অসদাচরণ বলে গণ্য হবে । এছাড়া রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসারও কমিটিকে প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দেবেন।