শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, আশ্বিন ৫ ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬

ব্রেকিং

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ছাড়া ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে না: সৌদি যুবরাজ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার ২৮ অভিযোগ সত্যিকারের জনবান্ধব পুলিশ হোন: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হবিগঞ্জে মানহানি মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান আরেক হত্যা মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান গ্রেফতার সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে দরপত্র কিনেছে বিদেশি ৭ প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো গ্রুপের সব সম্পত্তি দেখভালে রিসিভার নিয়োগের নির্দেশ ১০৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ রেখে গেছেন হাসিনা বৈদেশিক মুদ্রা আইনের মামলায় সালমান ও আনিসুল হক ৫ দিনের রিমান্ডে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত‍্যা যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান সাত দিনের রিমান্ডে লেবাননে ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে ২০ জন নিহত

জাতীয়

সালমান রহমানের গুলশানের বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ

 আপডেট: ২০:২৬, ৮ আগস্ট ২০২৪

সালমান রহমানের গুলশানের বাড়ি এখন ধ্বংসস্তূপ

ঢাকার কূটনৈতিক পাড়া খ্যাত গুলশান-২ এর ৭১ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটিতে এখন আর নাম ও নম্বর ফলক নেই। সীমানা দেয়ালের প্রধান ফটক ভাঙাচোরা। প্রবেশ করতে চাইলে নিয়ম মাফিক বাধা নেই নিরাপত্তা প্রহরীর।

ফটকের ফাঁক গলে ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে দুটি পুড়ে যাওয়া গাড়ির ‘কঙ্কাল’। বাসায় অতি যতনে থাকা পারিবারিক কিছু ছবি ছাইয়ের মধ্যে ছড়িয়ে আছে প্রাঙ্গণজুড়ে। এসব দেখে বোঝার বাকি নেই, আগুন দেওয়াসহ ধ্বংসযজ্ঞ ও লুটপাট চালানো হয়েছে অভিজাত এলাকার এই বাড়িটিতে।

গুলশানের তিনতলা এই বাড়িটি দেশের সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও গত জানুয়ারির নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমানের।

মাত্র তিনদিন আগেও ঝা চকচকে প্রাণোচ্ছ্বল এই বাড়িজুড়ে এখন শুধুই নীরবতা আর পোড়া গন্ধ।

সোমবার শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরের পর পরই বাড়িটিতে ঢুকে লুটপাট চালানো হতে থাকে। যার যেটা খুশি নিয়ে যাচ্ছিলেন, এর ভিডিও চিত্রও ছড়িয়েছে, যেখানে এক নারীকে বলতে শোনা যায়, “ভিডিও করছেন কেন, সবাই তো নিচ্ছে, আমরাও নিচ্ছি।”


সেদিন লুট করা হয় বাড়ির সবকিছু, খুলে নেওয়া হয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রগুলোও।

এরপর জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাড়ির প্রাঙ্গণে ও গ্যারেজে থাকা ১২ টি গাড়ি। দ্বিতীয় তলায়ও আগুনে পোড়ার স্পষ্ট ছাপ। এক কথায় পুড়িয়ে দেওয়া বাড়িতে কিছুই আর লুট করতে অবশিষ্ট নেই।

বৃহস্পতিবারও বাড়িটিতে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা গেল। দু-একজন বাড়ির ভেতরের বিভিন্ন রড, স্টিল কেটে কেটে নিয়ে যাচ্ছেন নিজের ইচ্ছামত

কেউ এসেছেন দেখতে, ভেতরে ঢুকে ছবিও তুলছেন তারা। ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন আশে-পাশে। এদের কেউ কেউ এমন প্রশ্নও রাখছিলেন, “ক্ষমতা পুড়ে শেষ হইতে কতক্ষণ লাগে?”

স্থানীয় একজন জানালেন, এই বাড়িতে লুটপাট চালিয়েছে যারা তারা আশেপাশের বাড়ি থেকেই এসেছে। এদের মধ্যে অনেকেই উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্য।

কেবল সালমান রহমানের বাড়ি নয়, লুটপাট হয়েছে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার রাণীগাঁওয়ে বেক্সিমকো লিমিটেডের অ্যাগ্রো ফার্মের শতাধিক গরু ও গাড়লও।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার ভোরে প্রায় দেড়শ লোক খামারে হামলা চালিয়ে ৫০টি উন্নতজাতের গরু ও ৯০টি গাড়ল নিয়ে গেছে। কর্মচারীদের মারধর করে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও মূল্যবান জিনিসপত্রও লুট করা হয়।

সালমান এফ রহমানের গুলশানের বাড়িটির রান্নাঘরেরও সব কিছু লুটে নেওয়া হয়েছে। 
সালমান এফ রহমানের গুলশানের বাড়িটির রান্নাঘরেরও সব কিছু লুটে নেওয়া হয়েছে। 

খামারটিতে পশুপালন ছাড়াও কমলা, মাল্টাসহ নানা ফল ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করা হত।

সরকার প্রধানের বিদায়ের আগেরদিন রোববারই বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পোশাকের পরিচিত ব্র্যান্ড ইয়েলোর বিক্রয়কেন্দ্রে আগুন দেওয়া হয়। ইয়েলো বেক্সিমকো গ্রুপেরই একটি প্রতিষ্ঠান, এটিও সালমান পরিবারের মালিকানায় আছে।

সেদিন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খবর পেয়েও ঘটনাস্থলে যেতে ব্যর্থ হন। রাত পর্যন্ত জ্বলে সেই আগুন। আগুনে ভবনটির চারতলা জুড়ে থাকা ইয়েলোর শোরুম ও ইয়েলো ক্যাফে পুড়ে যায়।

একইদিন সাভারের জিরানী এলাকায় বেক্সিমকো গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় আগুন দেওয়া হয়। খবর পেয়েও বাধার মুখে আগুন নেভাতে যেতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কর্মীরা।

সরকার পতনের পর সালমান এফ রহমানের পরিবারের মালিকানাধীন চার প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মা, আইএফআইসি ব্যাংক, শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারদর পড়ে যাচ্ছে, যদিও টানা তিন দিনে পুঁজিবাজারের সূচক বেড়েছে প্রায় ৭০০ পয়েন্ট।

গ্রুপের সবচেয়ে বড় কোম্পানি বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারদর ফ্লোর প্রাইস দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। এই দরে শেয়ারের কোনো ক্রেতা নেই।

হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে বেক্সিমকো গ্রুপসহ সালমান এফ রহমানের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেওয়া একাধিক ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করে সবকটিই বন্ধ পাওয়া যায়।

বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি ছিলেন নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসার আগে নিজের গড়া ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আন্দোলন’থেকে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ধানমণ্ডি এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন সালমান।

পরে ২০০১ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে নৌকার টিকেটে নির্বাচন করে তিনি পরাজিত হন তার আত্মীয় তৎকালীন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কাছে। প্রায় দেড় যুগ পর ২০১৮ সালে ঢাকা-১ আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হন তিনি। ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনে দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসনে জায়ের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আবারও সংসদে যাওয়ার টিকিট পান সালমান এফ রহমান।