বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১২ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কুষ্টিয়ায় পৃথক দুই হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন

 প্রকাশিত: ১৮:১৮, ১১ আগস্ট ২০২২

কুষ্টিয়ায় পৃথক দুই হত্যা মামলায় ৬ জনের যাবজ্জীবন

কুষ্টিয়া মডেল ও কুমারখালী থানার পৃথক দুটি হত্যা মামলায় ৬জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডের আদেশ দিয়েছে আদালত। 

বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ অতিরিক্ত আদালত-১এর বিচারক তাজুল ইসলাম এবং বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আশরাফুল ইসলাম  জনাকীর্ণ আদালতে আসামীদের উপস্থিতিতে এই রায় দেন। 

রায়ে কারাদন্ডসহ পৃথকভাবে ২৫হাজার টাকা এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর সাজার আদেশ দিয়েছেন আদালত।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ডা: সানাউর রহমান (৫৭) হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্তরা হচ্ছে- কুষ্টিয়া সদর উপজেলার খাজানগর গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান ব্যাপারীর ছেলে আজিজুল ইসলাম (২৫), আব্দুর রহমান ওরফে কালা কাজীর ছেলে সাইজুদ্দিন কাজী (৩০), কবুরহাট দোস্তপাড়ার আব্দুস সামাদ সরদারের ছেলে জয়নাল সরদার (৩৮) এবং খাজানগর মাদ্রাসাপাড়ার আজিজুল হক খানের ছেলে সাইফুল ইসলাম খান (৩০)।

অপরদিকে কুমারখালী থানার ব্যবসায়ী রিয়াজুল হত্যা মামলায় উপজেলার বাড়াদি গ্রামের বাসিন্দা মৃত: আইনুদ্দিন বিশ^াসের ছেলে সিফাত বিশ^াস (৫০) এবং ভাতিজা মৃত: জয়েন বিশ^াসের  ছেলে ওয়াসিম আলি(৩৭)।

মামলা নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২০ মে সকাল পৌনে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মৃত: বজলুর রহমানের ছেলে হোমিও চিকিৎসক মীর সানাউর রহমান(৫৭) তার সহযোগী কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক মো: সাইফুজ্জামানসহ নিজ দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বটতৈল শিশির মাঠ এলাকায় পৌছলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা আসামীরা পেছন থেকে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালায়। আসামীরা ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে এবং রড ও লাঠিসোটা ব্যবহার করে রক্তাক্ত জখম করে ফেলে রেখে যায়। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত দু’জনকে উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়।সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মীর সানাউর রহমানকে মৃত ঘোষনা করেন।গুরুতর আহত ইবি শিক্ষককে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই মীর আনিসুর রহমান বাদি হয়ে ওই বছরের ২১ মে কুষ্টিয়া মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল কুষ্টিয়া মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক আজিজুর রহমান আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে ঘটনাটিকে কতিপয় ধর্মান্ধ ব্যক্তিদের পরিকল্পনায় ঘটেছে বলে রহস্য উন্মোচিত হয়েছে মন্তব্য করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।  
অপরদিকে ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে উচ্চশব্দে সাউন্ড বক্স বাজানোকে কেন্দ্র করে কুমারখালী থানার বাড়াদি গ্রামের ব্যবসায়ী রিয়াজুলকে (৫৫)  ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। 
এ ঘটনায় নিহতের ছেলে শহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে ওই বছরের ২৪ এপ্রিল কুমারখালী থানায় ৯জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত শেষে কুমারখালী থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক তদন্ত কর্মকর্তা দীলিপ কুমার বিশ্বাস ২০১৭ সালে ১০ সেপ্টেম্বর আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যাকান্ডে জড়িত বলে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। 

কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতের সরকারি কৌসুলি এ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, ব্যবসায়ী রিয়াজুল হত্যা মামলায় স্বাক্ষ্য শুনানী শেষে দুই আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় তাদের যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ১০হাজার টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ৬মাসের সাজার আদেশ দিয়েছে আদালত। 

কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী জানান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হোমিও চিকিৎসক সানাউর রহমান হত্যা মামলায়  পুলিশের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনের পর দীর্ঘ স্বাক্ষ্য শুনানী শেষে ৪ আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমানিত হওয়ায় তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডসহ প্রত্যেককে পৃথকভাবে ২৫ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড অনাদায়ে আরও ১বছরের সাজা প্রদান করে আদালত। 

মন্তব্য করুন: