শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফি নেয়ার ঘটনা তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

 প্রকাশিত: ১৫:৪৭, ৬ জুলাই ২০২২

আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফি নেয়ার ঘটনা তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট

গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে রিটকারীদের কাছ থেকে আইনজীবীর ১২ কোটি টাকা ফি নেয়ার ঘটনা তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।  

রিটে ১২ কোটি টাকা ফি নেয়া হয়েছে কিনা কিংবা হয়ে থাকলে তার আইনী বৈধতা কি, তা তদন্তের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। 

সুপ্রিমকোর্টের এডভোকেট আশরাফুল ইসলাম আশরাফ এ রিট দায়ের করেন। 

তিনি সাংবাদিকদের আজ জানান, রিটে মন্ত্রীপরিষদ সচিব, বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও সচিব এবং আইনজীবী ইউসুফ আলীকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়েছে।  

রিটটি আগামীকাল বিচারপতি খিজির হায়াত ও বিচারপতি আক্তারুজ্জামান সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হবে বলেও জানান এ আইনজীবী। 

তিনি বলেন, 'একজন আইনজীবী তার ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কি পরিমাণ ফি নেবে, তার সঙ্গে কি আচরণ করবে তা বার কাউন্সিল রুলসে বলা আছে। এ কারণে বিষয়টি তদন্ত চেয়ে রিটটি দায়ের করেছি।'

এদিকে আইনজীবী ইউসুফ আলী ৩ জুলাই জানিয়েছিলেন, তার সব একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। ওইদিন এ আইনজীবী ১২ কোটি টাকার সমঝোতার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, গ্রামীণ টেলিকম থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারীদেরকে বঞ্চিত করে মামলা প্রত্যাহার সংক্রান্ত যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে- তা ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও অসত্য।

তিনি বলেন, ‘আমরা তথাকথিত সামাজিক ব্যবসার ধ্বজাধারী সুদখোর ইউনূসকে “চুবানী” দিয়েই সুদে আসলে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বন্ধুদের প্রাপ্য ন্যায্য পাওনা আদায় করে দিয়েছি। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কত পেয়েছি সেটা বলতে চাইনা। এটা ক্লায়েন্টের সঙ্গে আমার গোপনীয় চুক্তি। আমার মক্কেল যেটা দিয়েছেন- সেটাই আমি পেয়েছি।

আমাকে নিয়ে ১২ কোটি টাকার যে গল্প বানানো হয়েছে তা সম্পূর্ণ আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কিছু না বলে দাবী করেন তিনি।

তিনি জানান, তার ব্যক্তিগত তিনটি একাউন্ট, তার পার্টনারের দুইটা আর তার চেম্বারের একটা একাউন্ট। সবগুলো একাউন্ট জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

আইনজীবী ইউসুফ আলী বলেন, লিখিত চুক্তির শর্ত মোতাবেক গ্রামীণ টেলিকম সেটেলমেন্ট একাউন্টে ৪৩৭ কোটি টাকা প্রদান করার পর প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মচারী বিজ্ঞ তৃতীয় শ্রম আদালত, ঢাকাতে উপস্থিত হয়ে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দি প্রদান করে তাদের স্ব স্ব মামলা প্রত্যাহার করে নেন। একইভাবে তাদের অনুরোধে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন সকল রীট মামলা, আদালত অবমাননার মামলা এবং গ্রামীণ টেলিকম অবসানের প্রার্থনায় আনীত আলোচিত কোম্পানী ম্যাটার নং ২৭১/২০২১ প্রত্যাহার করি।

উক্ত মামলাসমূহ প্রত্যাহার করার পর, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীবৃন্দ সন্তুষ্ট হয়ে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে আমাদের ফিস বাবদ ইউনিয়নের একাউন্ট থেকে একাউন্ট পেয়ী চেকের মাধ্যমে আমাদের ফিস প্রদান করেছেন।
এদিকে ১২ কোটি টাকায় সমঝোতার বিষয়টি জেনে বিস্ময় প্রকাশ করেছে বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

আদালত বলেছে, আমরা শুনেছি শ্রমিকদের আইনজীবীকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে তাদেরকে মামলায় আপস করতে বাধ্য করা হয়েছে।

হাইকোর্ট বলে, কোর্টকে ব্যবহার করে অনিয়ম যেন না হয়ে থাকে। যদি সবকিছু আইন অনুযায়ী না হয়, তবে বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখা হবে। আমি চাইনা কোর্ট এবং আইনজীবীর সততা নিয়ে যেনো কোন প্রশ্ন না ওঠে।

ওই দিন আদালতে গ্রামীণ টেলিকমের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোস্তফিজুর রহমান খান। শ্রমিকদের পক্ষে শুনানি করেন এডভোকেট ইউসুফ আলী।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ টেলিকমের অবসায়ন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষে এ আবেদন দায়ের করা হয়।

আইনজীবী ইউসুফ বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের কাছে শ্রমিকদের পাওনা আড়াইশ কোটি টাকার বেশি। এই পাওনা টাকার দাবিতে কোম্পানিটির অবসায়ন চাওয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন: