বুধবার ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, অগ্রাহায়ণ ২৫ ১৪৩২, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৭

ব্রেকিং

দুর্নীতি ও দুঃশাসনমুক্ত সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়তে চায় জামায়াত: পরওয়ার তফসিলের পর অনুমোদনহীন আন্দোলন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছাড়াল ৪০০ প্রধান বিচারপতির বাসভবনসহ আরও কয়েকটি এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা বেগম রোকেয়াকে ‘কাফির-মুরতাদ’ বললেন রাবি শিক্ষক শত বছরেও কেন আরেকজন রোকেয়া তৈরি হলো না, আক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার দেশের বাইরে যেতে চান না খালেদা জিয়া নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র জনগণ রুখে দেবে: নজরুল ফের সংঘর্ষে জড়াল ঢাকা কলেজ ও আইডিয়ালের শিক্ষার্থীরা ডিসেম্বরে এক লাখ ভ্যাট নিবন্ধনের লক্ষ্য এনবিআরের থাই হামলায় কম্বোডিয়ার নিহত বেড়ে ৬ লেবাননে হিজবুল্লাহর স্থাপনায় হামলার দাবি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর লন্ডনযাত্রা স্থগিত, আপাতত ঢাকাতেই চলবে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা রাজশাহীতে এনসিপি নেতা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত, হত্যাচেষ্টার অভিযোগ থানায় টানা ৪ দিন পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির ঘরে আফগান সীমান্তের কাছে ‘জঙ্গি হামলায় ৬ পাকিস্তানি সেনা নিহত’ উত্তর-পূর্ব জাপানে ৭.৫ মাত্রার ভূমিকম্পে আহত অন্তত ৩০

জাতীয়

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যায় গৃহকর্মী, ধারণা পুলিশের

 প্রকাশিত: ১৬:৩৭, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যায় গৃহকর্মী, ধারণা পুলিশের

ঢাকার মোহাম্মদপুরে ছুরিকাঘাতে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় পুলিশ এক তরুণীকে সন্দেহ করছে, যিনি মাত্র চারদিন আগে অস্থায়ী গৃহকর্মী হিসেবে সেখানে কাজ নিয়েছিলেন।

আয়েশা নামের ওই তরুণী সোমবার সকালে কাজে এসেছিলেন বোরকা পরে, দেড় ঘণ্টা বাদে বেরিয়ে যান স্কুলড্রেস পরে—কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে।

মাঝের সময়টিতেই ওই বাসায় খুন হন মা-মেয়ে। পরে খবর পেয়ে ওই বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাসাটির অবস্থান শাহজাহান রোডে রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিপরীত পাশের আবাসিক ভবনের সপ্তম তলায়।

নিহত লায়লা আফরোজের বয়স ৪৮ বছর। তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজের বয়স ১৫ বছর। নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল, আর মা লায়লা আফরোজ ছিলেন গৃহিণী।

কিশোরীর বাবা এ জেড আজিজুল ইসলাম উত্তরার সানবিমস স্কুলের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে ওই বাসায় প্রায় ১৩ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। তাদের গ্রামের বাড়ি নাটোরে।

প্রতিদিনের মতো সোমবার সকাল ৭টার দিকে স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বেরিয়ে যান আজিজুল। স্কুলে পরীক্ষা চলমান থাকায় বাসায় ফেরেন তাড়াতাড়ি।

বেলা ১১টার দিকে ফিরে বাসার এসেই তিনি স্ত্রী-কন্যার লাশ দেখতে পান। পরে তার চিৎকারে আশেপাশের বাসিন্দারা বেরিয়ে আসেন, খবর দেওয়া হয় পুলিশে।

ভবনের একাধিক সিসিটিভি ভিডিও বিশ্লেষণ করে পুলিশ বলছে, সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে বোরখা পরে ওই বাসায় ঢোকেন আনুমানিক ২০ বছর বয়সি আয়েশা। আর ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুলড্রেস পরে নির্বিঘ্নে বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ওই স্কুলড্রেসটি ছিল খুন হওয়া নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসার।

ওই বাসা থেকে পুলিশ দুটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করেছে। হত্যাকারী ঘটনার পর বাসার বাথরুম ব্যবহার করেছেন, এমন আলামত পাওয়ার কথাও বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

এখন পর্যন্ত খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন ওই গৃহকর্মীরই জড়িত থাকার বিষয়টি ধারণা করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার ইবনে মিজান বলেছেন, “ঘটনার আগে-পরে ওই বাসায় একজনের আসা যাওয়াই দেখা গেছে।

“সিসি ক্যামেরা ফুটেজে আমরা একজনই দেখেছি, পরে দেখব আশেপাশে আরও কেউ ছিল কি না। পরে জানতে পারব তার সাথে আশেপাশে কেউ ছিল কি না।”

সরেজমিনে ওই বাসাটিতে গিয়ে দেখা যায়, লিফটের সামনে থেকে বাসার দরজা পর্যন্ত ছোপ ছোপ রক্তের দাগ। দরজা খুলতেই বাসায় আসবাবপত্র এলোমেলো অবস্থায় দেখা গেছে।

বাসার ভেতরের অবস্থার বিষয়ে পুলিশ বলছে, বাসায় ধস্তাধস্তির আলামত রয়েছে, মেঝেতে ও দেয়ালে রক্তের দাগ রয়েছে। আলমারি ও ভ্যানিটি ব্যাগ তছনছ অবস্থায় রয়েছে। এ থেকে তাদের ধারণা, বাসা থেকে কিছু খোয়া যেতে পারে।

এদিকে গৃহকর্তা আজিজুল বাসায় এসে প্রথমে দরজায় নক করে কোনো সাড়াশব্দ পাননি, এরপর দেখতে পান দরজা খোলা। তিনি প্রবেশ করে ড্রইং রুমে মেয়ে নাফিসার রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন এবং পাশের রুমে একটু দূরে স্ত্রীর রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান।

বেঁচে থাকতে পারে ধারণা করে অন্যান্য প্রতিবেশীদের সহায়তায় মেয়েকে হাসপাতালে পাঠিয়েছিলেন আজিজুল, সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আর পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে লায়লা আফরোজের লাশ উদ্ধার করে।

লাশ দুটির সুরতহালের পর ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। দুজনের শরীরেরই একাধিক স্থানে এলোমেলো ছুরিকাঘাতের চিহ্ন থাকার কথা বলেছে পুলিশ।

আজিজুল ইসলাম বলেন, “আমাদের একজন কাজের মহিলার দরকার ছিল। সাধারণত গেটে অনেকেই কাজের সন্ধানে আসেন। আমরা দারোয়ানকে এমন কেউ আসলে জানানোর কথা বলে রেখেছিলাম।

“৪ দিন আগে একটি মেয়ে কাজের সন্ধানে আসে। বোরকা পরিহিত অবস্থায় ওই মেয়েটি আসলে দারোয়ান তাকে আমাদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়৷ এরপর আমার স্ত্রী মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে কাজে রেখে দেয়। পরে আমি স্ত্রীর মুখে শুনেছি, মেয়েটার নাম আয়েশা।”

আয়েশা তাদেরকে জানিয়েছে, তার গ্রামের বাড়ি রংপুর, জেনিভা ক্যাম্পে চাচা-চাচির সঙ্গে থাকেন। বাবা-মা আগুনে পুড়ে মারা গেছে, তার শরীরেও আগুনে পোড়ার ক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছিল। স্থায়ী গৃহকর্মী না হওয়ায় তার কোনো কাগজপত্র রাখা হয়নি বলে জানান আজিজুল।

তিনি জানান, কাজ শুরুর পর প্রথম দুদিন সময় মতোই এসেছে, রোববার এসেছিল সাড়ে ৯টার দিকে।

সোমবার সকাল ৭ টার পর যখন ওই বাসায় যাওয়ার জন্য আসে, স্বাভাবিকভাবেই বাসার নিরাপত্তাকর্মী খালেক তাকে ভেতরে যেতে দেন। কিন্তু বের হওয়ার সময় স্কুলড্রেস পরে যাওয়ার সময় তার মুখে মাস্ক থাকায় গেটে দায়িত্বরত থাকা খালেক চিনতে পারেননি।

তার পরেও গেট থেকে বের হওয়ার পর তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি সপ্তম তলার ‘৭বি’ ফ্ল্যাটে থাকেন বলে চলে যান। সেটি আজিজুলেরই ফ্ল্যাটের নম্বর, সেখানেই গৃহকর্মীর কাজ নিয়েছিলেন আয়েশা।

ঘটনার পর দারোয়ান খালেককে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তিনি পুলিশকে বলেছেন, ৪দিন আগে বাসায় কাজের জন্য আসায় তরুণীকে ওই ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ওই তরুণী তার পূর্বপরিচিত নন।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার ইবনে মিজান বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পেয়েছি, সেসব যাচাই বাছাই চলছে।”

গৃহকর্মীর প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমরা ঘটনার সঙ্গে তার প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কাজ করছি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করছি, হত্যার আগে পরে তার উপিস্থিতি ও অ্যাকটিভিটিজ বিশ্লেষণ করে পরবর্তি তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাব।”