শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৫ ১৪৩০, ১৯ রমজান ১৪৪৫

স্পেশাল

পদ্মা সেতু : মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষকদের ভাগ্যবদলের হাতছানি

 প্রকাশিত: ১২:১২, ২৩ জুন ২০২২

পদ্মা সেতু : মেহেরপুরের প্রান্তিক কৃষকদের ভাগ্যবদলের হাতছানি

স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে কৃষি নির্ভর মেহেরপুরের কৃষকরা পাবেন কৃষির দাম। সম্প্রসারিত হবে কৃষির বাজার। বদলে যাবে জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের অর্থনৈতিক চিত্র।

প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মেহেরপুরসহ সব জেলায় অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে। ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার সঙ্গে যোগাযোগ সহজতর হবে। বলছিলেন- মেহেরপুর সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল আমিন ধুমকেতু। তিনি বলেন- বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে গ্রামীণ উন্নয়নশীল এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, জীবনমানের উন্নয়ন ও জ্ঞান-মনোভাবের ব্যাপক পরিবর্তনে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির বিকল্প নেই। স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হলে বদলে যাবে জেলার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের অর্থনৈতিক চিত্র। ইতোমধ্যেই এ অঞ্চলে জমির দাম  অনেকটাই বেড়ে
গেছে।

পদ্মা সেতুর এপারে সংযোগ সড়ক থেকে ভাঙ্গা উপজেলার তিনদিকে তিনটি রাস্তা চলে গেছে। এর একটি বরিশাল, একটি খুলনা অংশে, আরেকটি রাজবাড়ী, যশোর, বেনাপোল, চুয়াডাঙ্গা হয়ে মেহেরপুর। এ সড়ক যুক্ত হবে মোংলা, পায়রা সমুদ্রবন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে। ফলে তিন বন্দর দিয়েই আমদানি পণ্য দ্রুত ঢাকাসহ শিল্পাঞ্চলগুলোয় প্রবেশ করতে পারবে।

এতে রফতানি পণ্যের লিড টাইম (ব্যাক টু ব্যাক এলসির আওতায় কাঁচামাল আমদানি করে তা দিয়ে পণ্য তৈরির পর রফতানি করতে যে সময় লাগে) কমে যাবে। ফলে দ্রুত ব্যবসার রিটার্ন বা মুনাফা পাওয়া যাবে। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হবে বহুমুখী খাত। সেতুর মাওয়া অংশ থেকে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করবে। এভাবে সারা দেশে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে

মেহেরপুরের প্রবীণ সাংবাদিক ও লেখক তোজাম্মেল আযম বলেছেন- পদ্মা সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। এ অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি একটি বড় অর্জন। এই সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নতি সাধিত হবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আঞ্চলিক বৈষম্য কমে যাবে। নতুন শিল্প কলকারখানা স্থাপিত হলে এখানকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের জন্মস্থান মেহেরপুরের মুজিবনগর। বঙ্গবন্ধুর লিখিত নির্দেশে স্বাধীনতা পরবর্তী মুজিবনগরে এক জায়গার দাঁড়িয়ে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরভিত্তিক মানচিত্র। মুজিবনগরে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধিনে স্থাপনা, মুজিবনগর  স্মৃতিসৌধ, পাকসেনাদের নির্যাতনের ভাস্কর্য। যা দেখার জন্য প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসে হাজারো পর্যটক। নানা প্রতিবন্ধকতা পার হয়ে তাদের এখানে আসতে হয়। পদ্মা সেতু চালু হলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। ফলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বাড়বে। সেই সঙ্গে বাড়বে রাজস্ব। পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে মেহেরপুর জেলা প্রশাসন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে মেহেরপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা দ্রুততম হবে। এতে সময় ও যাতায়াত খরচ কমবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এ অঞ্চল থেকে দেশের দূর-দূরান্তে পণ্য পরিবহনে ব্যবসায়ীরাও দারুণভাবে উপকৃত হবেন। তারুণ্যনির্ভর বিকাশ ঘটাতে পদ্মা সেতুকেন্দ্রিক প্রশিক্ষণ কর্মকা- পরিচালনা করতে হবে। বিশ্বমানের
হাসপাতাল ও হোটেল-মোটেলও তৈরি হতে পারে। পদ্মা সেতু প্রস্তুত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন- পদ্মা সেতু আমাদের গর্ব।   

মেহেরপুর চেম্বারের সভাপতি গোলাম রসুল বাসসকে বলেন-  ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের সঙ্গে জ্বালানির চাহিদা নিশ্চিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যুগান্তকারী উন্নয়ন হবে। এ অঞ্চলের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের গতি আসবে, আয় বৈষম্যও কমে যাবে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অল্প সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন করে মংলা বন্দরের মাধ্যমে রফতানি ও আমদানি করতে উৎসাহিত হবেন।

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে মেহেরপুর পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন বলেছেন- পদ্মা সেতুর সুফল পেতে শিল্পায়নের জন্য এখনই গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর ওপর জোর দিতে হবে।  তিনি মনে করছেন-   পদ্মা সেতু কেবল দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নয়, পুরো বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে দেবে। ‘গ্যাস-বিদ্যুৎ ও অবকাঠামোর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হলে দেশে পদ্মা সেতু কেন্দ্রীক সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। ভবিষ্যতে এই সেতু দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যোগাযোগ, বাণিজ্য, পর্যটনসহ অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে পারবে।’

মন্তব্য করুন: