বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৩ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

এডিটর`স চয়েস

হিজাবের মর্যাদা রক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

 আপডেট: ০৯:৫৪, ১৬ মার্চ ২০২২

হিজাবের মর্যাদা রক্ষা কেন গুরুত্বপূর্ণ?

হিজাব-নিকাব আমাদের কাছে অতি পরিচিত দুটি শব্দ। শব্দদুটি মূলত আরবী শব্দ হলেও তা আমাদের ভাষার শব্দভাণ্ডারে পাকাপোক্ত স্থান করে নিয়েছে।এর স্থান বাংলাভাষী মুসলিমদের অন্তরের গভীরে। হিজাব-নিকাব স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন ইসলামী সংস্কৃতির অংশ। মুসলিম নারীর মর্যাদা ও আভিজাত্যের প্রতিক।যুগ যুগ ধরে চলে আসা উম্মাহর মহীয়সী নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। সর্বোপরি তা কুরআন-সুন্নাহর পর্দার বিধান পালনের উত্তম উপায়।

এসব কারণে মুসলিম-মানসে হিজাব-নিকাবের স্থান অত্যন্ত গভীরে। এটি একটি পোশাকমাত্র না, এর সাথে জড়িয়ে আছে মুসলিম নারী-পুরুষের ধর্মীয় আবেগ, মহান আল্লাহ তাআলার আনুগত্যের পবিত্র প্রেরণা, উন্নত ও নির্মল ঐতিহ্যের অনুসরণ, সংযম, সচ্চরিত্র ও লজ্জাশীলতার মতো উন্নত চারিত্রিক গুণাবলির অনুশীলন। এইসব জিনিসের গুরুত্ব উপলব্ধি করার মতো জ্ঞানগত ও চিন্তাগত যোগ্যতা যাদের আছে, তারা হিজাব-নিকাবের গুরুত্বও উপলব্ধি করতে পারবেন।

জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গিটা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ নিজেকে কী ভাবছে সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার।মানুষ কি নিজেকে শুধু দু’পেয় একটি বুদ্ধিমান প্রাণী মনে করে, নাকি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ও আনুগত্যের সাথে উন্নত স্বভাব-চরিত্র ও সংযমী জীবন যাপনে দায়বদ্ধ আল্লাহ তাআলার বান্দা মনে করে? জীবন সম্পর্কে কে কী দৃষ্টিভঙ্গি লালন করে- এর ভিত্তিতেই নির্ণীত হয় কে কোন্ পথে যাবে? কোন্ বিষয়কে গুরুত্বপূর্ণ বা গুরুত্বহীন মনে করবে।

কারো কাছে ঈমান ও বিশ্বাস, সচ্চরিত্র ও নৈতিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যার জন্য অন্য সকল চাহিদা ও হাতছানি উপেক্ষা করা তার জন্য সহজ।অন্যদিকে কারো কাছে প্রকৃতির চাহিদা পূরণই মুখ্য। একারণে নীতি-নৈতিকতা, ঈমানদারী বিসর্জন দিতেও সে কুণ্ঠাবোধ করে না।মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির এই পার্থক্যটা মানুষের জীবন ও কর্মে খুব পরিষ্কারভাবে দৃষ্টিগোচর হয়।যে কেউ একটু চিন্তা করলেই বুঝবেন, যেসকল অনুষঙ্গের দ্বারা এই পার্থক্যটা খুব পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়, তার মধ্যে একটি হচ্ছে হিজাব-নিকাব।

বর্তমান সময়ের উন্মুক্ত অশ্লীলতার ব্যাপক বিস্তারের মধ্যে হিজাব-নিকাব একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বর্তমান সময়ে মুসলিম দেশগুলোতেও পর্দারক্ষা করে চলা নানা ক্ষেত্রে কঠিন ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। অমুসলিম দেশগুলোর কথা তো বলাই বাহুল্য। কোথাও কোথাও তো মুসলিম নারীর হিজাব-নিকাবের ব্যাপারে জিঘাংসামূলক মনোবৃত্তির প্রকাশও দেখা গেছে।

যাকে চরম অশিষ্ট, অভব্য আচরণ বললে মোটেই অত্যুক্তি হবে না। চিন্তা-চেতনার 

অশ্লীলতা যে একপর্যায়ে অত্যন্ত নীচু মানের আগ্রাসী মনোবৃত্তির জন্ম দেয়, এগুলো তারই ঘৃণ্য কিছু দৃষ্টান্তমাত্র।

সাহিত্য-সংস্কৃতিতে সংযম ও শ্লীলতার চর্চা অপরিহার্য। মানবসমাজের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই তা প্রয়োজন। যারা শান্তির কথা বলতে ও শুনতে চান, সব জায়গায় শান্তির সুবাতাস বয়ে যাক- এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তাদের অবশ্যকর্তব্য, অশ্লীলতা ও যথেচ্ছাচারের ক্রমবর্ধমান প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ করা। মানুষের ভিতরের পাশবিকতার রাশ টেনে ধরা না গেলে মানব বসতিতে শান্তি প্রতিষ্ঠা কিছুতেই সম্ভব নয়।

মানুষ প্রকৃত মানুষ তখনই হতে পারে, যখন সে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য অবলম্বন করে। কুরআন-সুন্নাহর মাধ্যমে যেসব বিধান আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তা আল্লাহ-প্রদত্ত। এর প্রভাবও অত্যন্ত গভীর। এর সাথে মানুষের আবেগ-অনুভূতিও অত্যন্ত গভীরভাবে জড়িত। একারণে কুরআন-সুন্নাহর বিধানের ব্যাপারে সর্বস্তরে গভীর সচেতনতা প্রয়োজন।সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা, আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে এই বাস্তবতা স্মরণ রাখা খুবই প্রয়োজন। হিজাব-নিকাব যেহেতু কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিধান, তাই এ বিষয়ে যে কোনো অবমাননাকর উক্তি বা আচরণ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

শান্তির জন্যই বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন।

মন্তব্য করুন: