শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

সৎকর্মে ব্যয় ও সহমর্মিতা

 প্রকাশিত: ১৪:০৮, ২১ নভেম্বর ২০২০

সৎকর্মে ব্যয় ও সহমর্মিতা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

যাকাত দিয়ে নিশ্চিন্ত ও নির্দয় হয়ে যাবে না। এরুপ মনে করবে না যে, এখন আমার দায়িত্বে কারো কোনরূপ সহমর্মিতা করা আবশ্যক নয়। যাকাত তো একটি নিয়মতান্ত্রিক হক। আরো অনেক কাজ এমন রয়েছে, ক্ষেত্র বিশেষে তাতে সম্পদ ব্যয় করা এবং সম্পদ না থাকলে কিংবা সম্পদের কাজ না হলে শরীর খাটিয়ে সাহায্য করা জরুরী। তবে এর প্রয়োজনের পরিমাণ আলিমদের থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নেবে। একটি আয়াত এবং হাদীস লিখে এর সংক্ষিপ্ত দলীল তারপর বিস্তারিত দলীল লেখা হবে।

সংক্ষিপ্ত দলীল

১. হযরত ফাতেমা বিনতে কায়েস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘নিঃসন্দেহে সম্পদে যাকাত ভিন্ন আরো কিছু হক রয়েছে। তারপর (এর সমর্থনে) তিনি এ আয়াত পাঠ করেন-

(এ আয়াত দ্বারা বিষয়টি এভাবে সমর্থিত হয় যে, এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা যাকাতেরও উল্লেখ করেছেন এবং বিশেষ ক্ষেত্রে মাল-সম্পদ দান করার কথাও উল্লেখ করেছেন। এতে প্রমাণিত হয় যে, সম্পদ ব্যয়ের এ সমস্ত ক্ষেত্র যাকাতের অতিরিক্ত)
(তিরমিযী, ইবনু মাজা, দারামী)

ফায়দা: উক্ত বক্তব্য আয়াত ও হাদীস উভয়টি দ্বারা প্রমাণিত হলো। হাদীসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ তীবী ও মিরকাত থেকে এর ব্যাখ্যায় কিছু দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। যেমনঃ ভিক্ষুককে ও ঋণপ্রার্থীকে বঞ্চিত করবে না। ব্যবহারের বস্ত্তসামগ্রী ধার দিতে অস্বীকার করবে না। পানি, লবণ ইত্যাদি সাধারণ বস্ত্তসমূহ এমনিতেই দিয়ে দিবে।

সম্মুখস্থ আয়াত ও হাদীসসমূহ দ্বারা আরো বিস্তারিত জানা যাবে।

বিস্তারিত দলীলসমূহ:

২. ‘তোমরা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করতে থাকো।’ (সূরা বাকারা-১৯৫)

৩. ‘এমন কে আছে, যে আল্লাহকে করয দেবে উত্তম করয?’ (সূরা বাকারা-২৪৫)
অর্থাৎ, ইখলাসের সাথে।

৪. ‘কস্মিনকালেও কল্যাণ লাভ করতে পারবে না, যদি তোমাদের প্রিয় বস্ত্ত থেকে তোমরা ব্যয় না করো। আর তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে আল্লাহ তা জানেন।’ (সূরা আলে ইমরান-৯২)

৫. ‘(জান্নাত) তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য। যারা সচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে।’ (সূরা আলে ইমরান ১৩৩-১৩৪)

৬. ‘আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।’ (সূরা তাওবা-১১১)

৭. ‘আর তারা (মুসলমানগণ) অল্প-বিস্তর যা কিছু ব্যয় করে এবং যত প্রান্তর তারা (আল্লাহর পথে) অতিক্রম করে, তা সবই তাদের নামে লেখা হয়, যেন আল্লাহ তাদের কৃতকর্মসমূহের উত্তম বিনিময় প্রদান করেন।’ (সূরা তাওবা-১২১)

৮. ‘আত্মীয়-স্বজনকে তার হক দান করো এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও।’ (সূরা বনী ইসরাঈল-২৬)

৯. ‘তোমরা যা কিছু (আল্লাহর রাস্তায়) দান করবে, আল্লাহ তাআলা তার পরিবর্তে পুরস্কার দান করবেন।’ (সূরা সাবা-৩৯)

১০. ‘তারা আল্লাহর প্রেমে অভাবগ্রস্ত, এতীম ও বন্দীকে অন্ন দান করে।’ (সূরা আদ-দাহর-৮)

ফায়দা: এরুপ আরো অনেক আয়াত আছে, যেখানে যাকাতের কথা উল্লেখ না করে অন্যান্য সৎকর্মে ব্যয় করার বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে।

হাদীসসমূহ

১১. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন-
‘হে আদম সন্তান! তুমি (সৎকাজে) ব্যয় করো। আমি তোমার জন্য ব্যয় করবো।’ (বুখারী ও মুসলিম)

১২. হযরত জাবের (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি হাদীসে ইরশাদ করেন-
‘লালসা (সম্পদের মোহ) থেকে বাঁচো। এই লালসা পূর্ববর্তী লোকদেরকে ধ্বংস করেছে।’ (মুসলিম)

১৩. হযরত আবু সায়ীদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘নিজের জীবদ্দশায় এক দিরহাম দান করা মরণকালে একশ’ দিরহাম দান করার চেয়ে উত্তম।’ (আবু দাউদ)

১৪. হযরত আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘দান করার ক্ষেত্রে (যতদূর সম্ভব) জলদি করো। কারণ, বিপদ তার আগে যেতে পারে না। বরং থেমে যায়।’ (রাযীন)

ফায়দা: দান করলে সওয়াব তো পাবেই। তাছাড়া দুনিয়াতেও বিপদমুক্তি হবে।

১৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি একটি খেজুর সমান বস্ত্ত পবিত্র উপার্জন থেকে ব্যয় করে- আর আল্লাহ তাআলা পবিত্র জিনিসই কবুল করেন- আল্লাহ তাআলা তা নিজ ডান হাতে গ্রহণ করেন (ডান হাতের অর্থ আল্লাহই ভালো জানেন)। তারপর তিনি তা বৃদ্ধি করেন। যেমন তোমাদের মধ্য থেকে কেউ তার গরুর বাছুর প্রতিপালন করে। এমনকি তা পাহাড় সমান হয়ে যায়।’ (বুখারী ও মুসলিম)

১৬. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘দান করায় সম্পদে ঘাটতি হয় না (চাই আমদানী বৃদ্ধি হোক বা বরকত বৃদ্ধি হোক বা সওয়াব বৃদ্ধি হোক, বৃদ্ধি হবেই)।’ (মুসলিম)

১৭. হযরত আবু যর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘কোন নেককাজকেই তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তা নিজের (মুসলমান) ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাত করাই হোক না কেন।’ (মুসলিম)

১৮. হযরত আবু মূসা আশআরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লা্হ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘প্রত্যেক মুসলমানের দায়িত্বে কিছু না কিছু সদকা (দান) করা জরুরী।

লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো- যদি কারো নিকট (সম্পদ) না থাকে? তিনি ইরশাদ করলেন- স্বহস্তে পরিশ্রম (সম্পদ অর্জন) করবে, তা নিজের কাজেও লাগাবে এবং সদকাও করবে।

লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো- যদি (অপারগতার কারণে) এও করতে না পারে বা (ঘটনাচক্রে) এমনটি না করে?
তিনি ইরশাদ করলেন- তাহলে কোন অভাবীকে সাহায্য করবে (এটিও সদকা)।

লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো- যদি এটাও না করে?
তিনি ইরশাদ করলেন- কাউকে কোন ভাল কথা শিক্ষা দিবে।
লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো- যদি এটাও না করে?
তিনি ইরশাদ করলেন- কারো অনিষ্ট করবে না। এটিও তার জন্য সদকা।’ (বুখারী ও মুসলিম)

ফায়দা: এগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কারণে সদকা বলেছেন যে, সদকার দ্বারা যেমন মানুষ উপকার লাভ করে, তেমনই এ সবের দ্বারাও উপকার লাভ করে। অন্যথায় সদকার আসল অর্থ তো আল্লাহর পথে সম্পদ দান করা। কারো অনিষ্ট না করাকেও উপকার করার মধ্যে গণ্য করা আল্লাহর কত বড় রহমত!

১৯-২০. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘মানুষের দেহের প্রত্যেক জোড়ার জন্য প্রতিদিন একটি করে সদকা (আবশ্যক) রয়েছে। দুই ব্যক্তির মাঝে ন্যায়বিচার করা এটিও সদকা। কাউকে বাহনে আরোহণ করতে বা তার সামানা বহন করতে সাহায্য করা এটিও সদকা। কোন উত্তম কথা (যার দ্বারা কারো কল্যাণ হবে) এটিও সদকা। যে কদম নামাযের জন্য উঠায় তাও সদকা। কষ্টদায়ক কোন জিনিস পথ থেকে সরিয়ে ফেলা এটিও সদকা। (বুখারী)

ফায়দা: মুসলিম শরীফের অন্য একটি হাদীসে এর ব্যাখ্যা এরুপ এসেছে যে, মানব দেহে গণনার যোগ্য ৩৬০ টি জোড়া রয়েছে। যে ব্যক্তি দৈনিক এই পরিমাণ নেককাজ করলো, সে নিজেকে দোযখ থেকে রক্ষা করলো।

২১. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘অতি উত্তম সদকা এই যে, দুধদানকারী কোন উটনী কাউকে ধার দেওয়া। এমনিভাবে দুধদানকারী কোন বকরী কাউকে ধার দেওয়া। (অর্থাৎ, এভাবে দেওয়া যে, ঐ ব্যক্তি এর দুধপান করতে থাকবে। যখন দুধ শেষ হয়ে যাবে, তখন তা ফেরত দিবে।) যা সকালে একটি পাত্র পূর্ণ করে দিবে। সন্ধ্যায় একটি পাত্র পূর্ণ করে দিবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

২২. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-

‘যে মুসলমান কোন বৃক্ষ রোপণ করলো বা কোন শস্য বপন করলো। তারপর তা থেকে কোন মানুষ, পাখি বা জীবজন্ত্ত ভক্ষণ করলো- তাও ঐ ব্যক্তির জন্য সদকা হবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)

মুসলিম শরীফের একটি বর্ণনায় হযরত জাবের (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তা থেকে যা চুরি হয়ে যাবে তাও ঐ ব্যক্তির জন্য সদকা।

ফায়দা: অথচ মালিক চোরকে উপকৃত করার ইচ্ছা করেনি। এরপরও সদকার সওয়াব পাওয়া কত বড় রতমত!

২৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- একজন অসৎ মহিলা এজন্য ক্ষমা লাভ করে যে, একবার সে একটি কুকুরের নিকট দিয়ে অতিক্রম করে। কুকুরটি একটি কূপের ধারে জিহ্বা বের করে দিয়ে পড়েছিলো। কুকুরটি পিপাসায় মৃত্যুর উপক্রম ছিলো। মহিলাটি তার চামড়ার মোজা বের করলো। নিজের ওড়নার সঙ্গে সেটি বাঁধলো। তা দ্বারা পানি উঠালো এবং কুকুরটিকে পান করলো। ফলে তাকে ক্ষমা করা হলো। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো পশুর (সেবা করার) মধ্যেও কি আমরা সওয়াব লাভ করি? তিনি ইরশাদ করলেন- যত সিক্ত কলিজাধারী (জীব) আছে, (অর্থাৎ, জীবিত প্রাণী) তার সবগুলোতেই সওয়াব আছে। (বুখারী ও মুসলিম)

ফায়দা: তবে বুখারী ও মুসলিমের অন্যান্য হাদীসে যেগুলো কষ্টদায়ক প্রাণী, যেমন- সাপ, বিচ্ছু ইত্যাদি সেগুলোকে হত্যা করার নির্দেশ এসেছে।

২৪. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘করুণাময়ের ইবাদত করো, মানুষকে খানা খাওয়াও এবং সালামের প্রসার ঘটাও। (অর্থাৎ, প্রত্যেক মুসলমানকে সালাম করো। সে পরিচিত হোক, চাই অপরিচিত হোক।) তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিযী, ইবনে মাজা)

২৫. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যখন নিজের মুসলমান ভাইয়ের মুখোমুখি হও (অর্থাৎ, সাক্ষাৎ হয়) তখন মুচকি হাসা (যার দ্বারা সে বুঝে যে, আমার সঙ্গে মিলিত হয়ে সে আনন্দিত হয়েছে) এটিও সদকা। কাউকে ভালো কাজের নির্দেশ করা এবং মন্দ কাজ করতে নিষেধ করা এটিও সদকা। পথ ভুলে গেলে কাউকে পথ বলে দেওয়া, এটিও তোমার জন্য সদকা। চোখে কম দেখে এমন লোককে সাহায্য করা তোমার জন্য সদকা। কোন পাথর, কাঁটা বা হাড্ডি পথ থেকে সরিয়ে ফেলা এটিও তোমার জন্য সদকা এবং নিজের বালতি থেকে নিজের ভাইয়ের বালতিতে (পানি) ঢেলে দেওয়া এটিও তোমার জন্য সদকা।’ (তিরমিযী)

২৬. হযরত সা’আদ বিন উবাদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট নিবেদন করলেন- উম্মে সা’দ (অর্থাৎ আমার মা) মৃত্যুবরণ করেছেন।
‘তাই কোন সদকা অধিক ফযীলতের (যার সওয়াব তাকে দান করবো?) তিনি ইরশাদ করলেন- পানি। তিনি একটি কূপ খনন করালেন এবং বললেন যে, এটি (অর্থাৎ, এর সওয়াব) উম্মে সা’দের জন্যে।’ (আবু দাউদ, নাসায়ী)

২৭. হযরত আবু সায়ীদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে মুসলমান কোন মুসলমানকে তার বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্র দান করবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে সবুজ বস্ত্র দান করবেন এবং যে মুসলমান কোন মুসলমানকে (তার) অভুক্ত (অর্থাৎ, খাবার না থাকা) অবস্থায় খাবার দিবে, আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের ফল দিবেন এবং যে মুসলমান কোন মুসলমানকে তৃষ্ণার সময় পানি পান করাবে, আল্লাহ তাকে (জান্নাতের) মোহরান্কিত (অর্থাৎ উৎকৃষ্ট) পানীয় পান করাবেন।’
(আবু দাউদ, তিরমিযী)
২৮. হযরত আনাস বিন মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘সাতটি বস্ত্ত এমন রয়েছে যেগুলোর সওয়াব মানুষের মৃত্যূর পরও চালু থাকে এবং সে তখন কবরে শুয়ে থাকে। যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন শিক্ষা দিলো বা কোন খাল খনন করালো বা কূপ খনন করালো বা গাছ লাগালো বা মসজিদ তৈরী করলো বা কুরআন শরীফ রেখে গেলো বা এমন সন্তান রেখে গেলো, যে তার মৃত্যূর পর তার মাগফিরাতের দু’আ করে।’ (তারগীব, বাযযার ও আবু নাঈমের উদ্ধৃতিতে)

ইমাম ইবনু মাজা গাছ লাগানো এবং কূপ খননের জায়গায় সদকা করা ও মুসাফিরখানার কথা উল্লেখ করেছেন। (তারগীব)

এ হাদীস দ্বারা দ্বীনী মাদরাসা প্রতিষ্ঠা এবং জনহিতকর কাজেরও ফযীলত প্রমাণিত হলো।

২৯. হযরত সা’আদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু (সম্পদ) বন্টন করলেন। আমি নিবেদন করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! অমুককেও দিন। (হাদীসের শেষাংশে আছে যে,) তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন-
‘আমি (কখনও) কা্উকে দিই, অথচ অন্য ব্যক্তি আমার নিকট তার চেয়ে অধিক প্রিয় হয়, (কিন্ত্ত) এ আশংকায় (দিই) যে, সে না পেলে ইসলামের উপর কায়েম থাকবে না। আর (এর ফলে) আল্লাহ তাআলা তাকে অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। (মুসলিম)

(কারণ, কিছু নওমুসলিম প্রথমে শক্তিশালী হয় না এবং কষ্ট সইতে পারে না। তাদের ইসলাম থেকে ফিরে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। তাই তাদেরকে আরাম পৌঁছানো জরুরী।)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা নওমুসলিমদের সাহায্য করা এবং আরাম পৌঁছানোর ফযীলত প্রমাণিত হলো।

৩০. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ঐ সত্তার শপথ! যিনি আমাকে সত্য ধর্ম নিয়ে প্রেরণ করেছেন! আল্লাহ তাআলা কেয়ামত দিবসে ঐ ব্যক্তিকে আযাব দিবে না, যে এতীমের প্রতি রহম করে, তার সঙ্গে নরমভাবে কথা বলে এবং তার এতীম হওয়া ও অসহায় হওয়ার প্রতি মায়া করে। (তারগীব তাবরানীর উদ্ধৃতিতে)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা এতীমখানায় সহযোগিতা করারও ফযীলত পাওয়া গেলো।

সারকথা: এ হলো, দশটি আয়াত এবং বিশটি হাদীস। হাদীসগুলো মিশকাত শরীফ থেকে নেওয়া হয়েছে। তবে দু-তিনটি হাদীস অন্য কিতাবের। সেগুলোতে ঐ কিতাবের নাম লিখে দেওয়া হয়েছে। এ সকল হাদীস দ্বারা সৃষ্টিজীবের উপকার করার বহু ক্ষেত্রের কথা অবগত হওয়া গেলো। এরুপ আরো অনেক কাজ রয়েছে, যার সবগুলো একটি আয়াতে এবং একটি হাদীসে একত্রিত হয়েছে।

আয়াত: নেকী ও তাকওয়ার কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো।

হাদীস: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় ঐ ব্যক্তি, যে মানুষকে অধিক উপকার পৌঁ ছায়। (তারগীব)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: