শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

রোযা রাখা

 প্রকাশিত: ১৯:০০, ২৬ নভেম্বর ২০২০

রোযা রাখা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

রোযা রাখা, বিশেষ করে রমাযানের ফরয রোযা এবং ওয়াজিব রোযা রাখার গুরুত্ব:

রোযা নামায ও যাকাতের মত ইসলামের একটি রুকন তথা স্তম্ভ। অর্থাৎ, অত্যন্ত মর্যাদাশালী অবশ্য করণীয় একটি নির্দেশ।

১. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে।’ (সূরা বাকারা -১৮৩)

২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘(লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ-’ এর উপর ঈমান আনা ছাড়া) আল্লাহ তাআলা ইসলামে আরো চারটি জিনিস ফরয করেছেন। অতএব যে ব্যক্তি তার মধ্য থেকে তিনটি জিনিস আদায় করবে, তা তাকে (পূর্ণ) কাজ দিবে না। যতক্ষণ না সব কয়টিই আদায় করবে। নামায, যাকাত, রমাযানের রোযা ও বাইতুল্লাহর হজ্জ।’

যার দ্বারা জানা যায় যে, যদি নামায, যাকাত ও হজ্জ সবকিছু পালন করে, কিন্ত্ত রোযা না রাখে তাহলে তার মু্ক্তির জন্য যথেষ্ট হবে না।

রোযার মধ্যে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য এমন রয়েছে, যা অন্য কোন ইবাদতের মধ্যে নেই, তা এই যে, রোযা থাকা আর না থাকার কথা আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ জানতে পারে না। তাই রোযা সে ব্যক্তিই রাখবে, যার মধ্যে আল্লা্হর মুহাব্বত বা আল্লাহর ভয় আছে। বর্তমানে কিছু ত্রুটি থাকলেও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে প্রমাণিত যে, ভালবাসা ও মর্যাদার কাজ করার দ্বারা অন্তরে ভালবাসা ও মর্যাদা সৃষ্টি হয়। তাই রোযা রাখার দ্বারা এই ঘাটতি পূর্ণ হয়ে যাবে। আর যার অন্তরে আল্লাহর ভয় ও ভালোবাসা থাকবে, সে দ্বীনের ব্যাপারে কত মজবুত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই রোযা রাখার মধ্যে যে, শক্তিশালী দ্বীনদার হওয়ার বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা প্রমাণিত হলো। সম্মুখের হাদীসদ্বয়ে এ বিষয়টিকেই এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে।

৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘মানুষের সমস্ত আমল তার জন্য, কিন্ত্ত রোযা তা কেবলমাত্র আমার জন্য।’ (বুখারী)

৪. অপর একটি বর্ণনায় আল্লাহ তাআলার এ ইরশাদ রয়েছে যে, রোযাদার ব্যক্তি তার খাওয়া, তার পান করা এবং (স্ত্রী সংক্রান্ত) তার জৈবিক চাহিদা আমার কারণে পরিত্যাগ করে। (বুখারী)

এ হাদীসের ব্যাখ্যা- বিশ্লেষণ পরবর্তী হাদীসে আছে।

৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তাআলার এ বাণী নকল করেন-
‘সে আমার জন্য খাওয়া ছেড়ে দেয়, আমার জন্য পান করা ছেড়ে দেয়, আমার জন্য স্বাদের বস্ত্ত ছেড়ে দেয় এবং আমার জন্য নিজের স্ত্রী ছেড়ে দেয়। (অর্থাৎ, নিজের খাহেশাত তার দ্বারা পুরা করে না।)’ (ইবনু খুযাইমাহ)

ফায়দা: এসব হাদীস দ্বারা উক্ত বিষয়টি প্রমাণিত হলো। আর এজন্যই রোযাকে আল্লাহ তাআলা নিজের জিনিস বলেছেন। যেমনঃ তিন নম্বর হাদীসে চলে গেছে। উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যাবলীর কারণে সম্মুখের হাদীসে খুব গুরুত্ব সহকারে রোযাকে সমস্ত আমলের মধ্যে তুলনাহীন বলা হয়েছে।

৬. হযরত আবু উমামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘আমি নিবেদন করলাম- হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে কোন (বড়) আমলের নির্দেশ দিন। তিনি ইরশাদ করলেন- রোযা রাখো! কারণ, কোন আমল এর সমকক্ষ নয়। আমি (পুনরায়) নিবেদন করলাম- হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে (বড়) কোন আমলের নির্দেশ দিন। তিনি এবারও ইরশাদ করলেন – রোযা রাখো! কারণ, কোন আমল তার মত নেই। আমি (তৃতীয়বার) পুনরায় নিবেদন করলাম- হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে (বড়) কোন আমলের নির্দেশ দিন। তিনি আবারও ইরশাদ করলেন- রোযা রাখো! কারণ, কোন আমল তার মত নেই।’ (নাসায়ী, ইবনু খুযাইমাহ)

ফায়দা: অর্থাৎ, কোন কোন বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে রোযা অতুলনীয়। যেমনঃ উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যে এবং আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা ও ভয় থাকার বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে রোযা অতুলনীয়। রোযাদার ব্যক্তি যদি এ বৈশিষ্ট্যের প্রতি লক্ষ্য রাখে তাহলে অবশ্যই সে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, গুনাহ ভয় ও ভালোবাসার কমতির কারণেই হয়ে থাকে। আর যখন গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে, তখন দোযখ থেকেও রক্ষা পাবে। সম্মুখের হাদীসের উদ্দেশ্যও এটিই।

৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘রোযা একটি ঢাল এবং দোযখ থেকে (বাঁচার জন্য) একটি শক্তিশালী দূর্গ।’
(আহমাদ, বাইহাকী)
রোযা এমন গুনাহের কাজ থেকে বাঁচায়, যেগুলো কিনা অভ্যন্তরীন রোগ, তেমনিভাবে অনেক বাহ্যিক রোগ থেকেও বাঁচায়। কারণ, এ সমস্ত রোগ বেশীর ভাগ সময় অধিক পরিমাণে পানাহার করার কারণে হয়ে থাকে। রোযার দ্বারা পানাহারে ঘাটতি হয় বিধায় এ ধরনের রোগও আর কাছে আসে না।
সম্মুখের হাদীসে এদিকে ইঙ্গিত রয়েছে।

৮. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘প্রত্যেক বস্ত্তর একটি যাকাত রয়েছে। আর শরীরের যাকাত হচ্ছে রোযা।’ (ইবনু মাজা)

ফায়দা: অর্থাৎ, যেভাবে যাকাতের মাধ্যমে সম্পদের ময়লা বের হয়ে যায়, তেমনিভাবে রোযার মাধ্যমে শরীরের ময়লা অর্থাৎ, দূষিত জীবানু যার দ্বারা রোগ সৃষ্টি হয়-দূর হয়ে যায়।

সম্মুখের হাদীসে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে এসেছে।

৯. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লা্হু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘রোযা রেখো, সুস্থ থাকবে।’ (তাবরানী)

রোযার দ্বারা যেভাবে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ ক্ষতিকর বস্ত্ত দূর হয়, তেমনিভাবে তার দ্বারা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ আনন্দও লাভ হয়। তাই ইরশাদ হচ্ছে।

১০. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে দীর্ঘ একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘রোযাদারের দু’টি আনন্দ (লাভ) হয়। প্রথম, যখন সে ইফতার করে (অর্থাৎ, রোযা খোলে, তখন ইফতার করে আনন্দিত হয়, যা স্পষ্ট ব্যাপার) এবং দ্বিতীয়, যখন স্বীয় প্রতিপালকের সঙ্গে মিলিত হবে, (তখন) নিজের রোযার জন্য আনন্দিত হবে। (বুখারী)

তারাবীহ:

রমাযানের আরেকটি ইবাদত তারাবীহের নামাযে কুরআন পাঠ করা এবং শ্রবণ করা, যা কিনা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। কিছু বিষয় এর মধ্যে রোযার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ রয়েছে। যেমন- ঘুম, যা কিনা পানাহারের মতই মনের প্রিয় বস্ত্ত- তারাবীহের দ্বারা এর মধ্যে কিছুটা স্বল্পতা আসে। তাছাড়া এই কম ঘুমানোর বিষয়টিও সম্পূর্ণরুপে অন্য কেউ জানতে পারে না।
অনেক সময় মানুষ নামাযের মধ্যে ঘুমায়, আর অন্যেরা মনে করে যে, সে জেগে আছে। আবার কোন কোন সময় সেজদার মধ্যে ঘুম আসার ফলে শরীরের অবস্থান এমন হয়ে যায় যে, এভাবে ঘুমানোর দ্বারা ওযূ ভেঙ্গে যায়, আর যখন ওযূ থাকলো না, তখন নামাযও থাকলো না। কিংবা ওযূ ভাঙলো না ঠিক, কিন্ত্ত ঘুমের অবস্থায় যে পরিমাণ নামায আদায় হয়েছে, তা সঠিক হয়নি। তাহলে এমতাবস্থায় ঘুমের মত প্রিয় বস্ত্তকে প্রতিহত করা বা নতুনভাবে ওযূ করে ঐ নামায পুনরায় পড়া বা নামাযের ঐ অংশকে পুনরায় আদায় করা-যা ঘুমের কারনে সঠিক হয়নি-সে ব্যক্তিই করতে পারে, যার অন্তরে আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা এবং ভয় রয়েছে। বিধায় রোযার মত এ ইবাদত অর্থাৎ, তারাবীহতে কুরআন পাঠ করা এবং শ্রবণ করার মধ্যেও প্রদর্শনী হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা একই আঙ্গিকের দু’টি ইবাদত একত্রে জমা করেছেন। একটি দিনের বেলা, আরেকটি রাতের বেলা। সম্মুখের হাদীসদ্বয়ে এ কথারই উল্লেখ রয়েছে।

১১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘আল্লাহ তাআলা রমাযানের রোযা ফরয করেছেন, আর আমি রমাযানের রাত্রি জাগরণকে (তারাবীহ ও কুরআনের উদ্দেশ্যে) তোমাদের জন্য (আল্লাহ তাআলার নির্দেশে) সুন্নাত বানিয়েছি। (যা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হওয়ার কারণে জরুরী)। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের বিশ্বাস রেখে রমাযানের রোযা রাখবে এবং রমাযানের রাত্রি জাগরণ করবে, সে তার গুনাহসমূহ থেকে ঐ দিনের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে যাবে, যেদিন তাকে তার মা প্রসব করেছিলো।’ (নাসায়ী)

১২. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘রোযা এবং কুরআন উভয়ে কিয়ামত দিবসে মানুষের জন্য শাফায়াত (অর্থাৎ, গুনাহ মাফের জন্য সুপারিশ) করবে। রোযা বলবে-হে আমার প্রতিপালক! আমি তাকে পানাহার ও নফসের খাহেশাত পুরা করা থেকে বিরত রেখেছি। বিধায় তার বিষয়ে আমার সুপারিশ কবুল করুন এবং কুরআন বলবে – আমি তাকে পূর্ণ নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।
(আহমাদ, তাবরানী ফিল কাবীর, ইবনু আবিদ দুনিয়া, হাকীম)

ফায়দা: উভয় হাদীসকে মেলানো হলে রোযা ও রাত্রি জাগরণের মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে- যার বিবরণ দেয়া হয়েছে-তা সুস্পষ্ট হয়ে যায়।

১৩. আল্লা্হ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘যে সমস্ত পুরুষ এবং নারী রোযা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য মাগফিরাত এবং বিরাট পুরস্কার প্রস্ত্তত করে রেখেছেন।’ (সুরা আহযাব-৩৫)

১৪. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (দীর্ঘ একটি হাদীসে) ইরশাদ করেন-
‘ঐ সত্তার শপথ! যার মুঠোয় মুহাম্মাদের প্রাণ, রোযাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধ (যা অনাহারে থাকার কারণে হয়ে থাকে) আল্লাহ তাআলার নিকট মেশকের সুগন্ধির চেয়ে অধিক সুগন্ধযুক্ত।’ (বুখারী)

ফায়দা: এ গন্ধের উৎস পাকস্থলী। বিধায় মেসওয়াক করার দ্বারা এ গন্ধ চলে যায় না। হাঁ কিছুটা হ্রাস পায়।

১৫. হযরত ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (দীর্ঘ একটি হাদীসে-যার মধ্যে আমলের সওয়াবের বিভিন্ন পরিমাণ বর্ণিত হয়েছে) ইরশাদ করেন-
‘রোযা কেবলই আল্লাহর জন্য। এর উপর আমলকারীর সওয়াব (অসীম, যা) আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।’ (তাবরানী ফিল আওসাত, বাইহাকী)

১৬. হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যখন রমাযানের প্রথম রাত আসে, তখন আসমানের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তারপর তার কোন দ্বার বন্ধ হয় না। এমতাবস্থায় রমাযানের শেষ রাত চলে আসে। এবং কোন ঈমানদার ব্যক্তি এমনই নেই যে, এ সমস্ত রাতের মধ্য থেকে কোন একরাতে নামায পড়ে (এর দ্বারা ঐ নামায উদ্দেশ্য যা রমাযানের কারণে হয়ে থাকে, যেমন- তারাবীহের নামায) তবে আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক সেজদার বিনিময়ে দেড় হাজার নেকী লেখেন এবং তার জন্য জান্নাতে লাল ইয়াকুত পাথরের একটি বাড়ী তৈরী করেন। যার ষাট হাজার দরজা হবে। তার প্রত্যেক দরজার সংলগ্ন একটি করে স্বর্ণের মহল হবে। যা লাল রঙের ইয়াকুত পাথর দ্বারা সজ্জিত হবে। তারপর যখন রমাযানের প্রথম দিনের রোযা রাখে, তখন এর উসীলায় বিগত গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় (যা গত রমাযানের এই দিন পর্যন্ত হয়েছে। অর্থাৎ, এই রমাযানের প্রথম তারিখ থেকে পূর্বের রমাযানের প্রথম তারিখ পর্যন্তের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়) এবং প্রতিদিন ফজর নামায থেকে আরম্ভ করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা তার ক্ষমার জন্য দু’আ করে এবং এ ব্যক্তি রমাযান মাসে যতগুলো নামায পড়বে- দিনে হোক চাই রাতে হোক-প্রত্যেক সেজদার বিনিময়ে একটি করে বৃক্ষ পাবে। যার ছায়ায় (অশ্ব) আরোহী পাচঁশত বছর পর্যন্ত পথ চলতে পারবে।(বাইহাকী)

১৭. হযরত সালমান (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শা’বান মাসের শেষ জুমুআয় ভাষণ দান করেন-
‘হে লোকসকল! তোমাদের নিকট একটি মহিমান্বিত ও বরকতপূর্ণ মাস এসেছে। (অর্থাৎ, রমাযান মাস)। এটি এমন একটি মাস, যার মধ্যে একটি রাত হয়েছে, যা (এমন যে, সেই রাতে ইবাদত করা) এক হাজার মাস (পর্যন্ত ইবাদত করার) থেকে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলা এ মাসের রোযা ফরয করেছেন এবং এর রাত্রি জাগরণ (তারাবীহ)কে সুন্নাত করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে কোন নেক কাজ দ্বারা (যা ফরয নয়) আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভ করবে, তা এমন হবে, যেন এ মাস ছাড়া অন্য সময়ে একটি ফরয আদায় করলো এবং যে ব্যক্তি একটি ফরয আদায় করলো, সে যেন এ মাস ছাড়া অন্য সময়ে সত্তরটি ফরয আদায় করলো। (তারপর ইরশাদ করেন) যে ব্যক্তি এ মাসে কোন রোযাদেরকে ইফতার করাবে (অর্থাৎ, কিছু ইফতারী দিবে) তা ঐ ব্যক্তির গুনাহ মাফের এবং দোযখ থেকে মুক্তির মাধ্যমে হবে এবং সেও ঐ রোযাদার ব্যক্তির সমান সওয়াব পাবে। কিন্ত্ত এতে করে ঐ রোযাদারের সওয়াব কমবে না। লোকেরা নিবেদন করলো- হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সবার তো এ পরিমাণ সামর্থ্য নেই, যার দ্বারা রোযাদারকে ইফতার করাতে পারে। (প্রশ্নকারীগণ ইফতার করানোর উদ্দেশ্য বুঝেছিলো, পেট ভরে আহার করাতে হবে।) তিনি ইরশাদ করলেন- আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকেও সওয়াব দেন, যে কোন রোযাদারকে একটি খেজুর বা পিপাসা নিবারিত হয় পরিমাণ পানি বা দুধের লাচ্ছি (দুধের মধ্যে পানি মিশিয়ে যা তৈরী করা হয়) দ্বারা ইফতার করাবে।
(ইবনু খুযাইমা)
এতেকাফ:

রমাযান সংক্রান্ত তৃতীয় আরেকটি ইবাদত রমাযানের শেষ দশদিনে এতেকাফ করা। এটি এমন একটি সুন্নাত, যা সবার দায়িত্ব, তবে গ্রামের এক ব্যক্তিও তা আদায় করলে সবার পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়। এতেকাফ বলা হয়- এ ইচ্ছা করে মসজিদে অবস্থান করা যে, এতদিন পর্যন্ত পেশাব, পায়খানা ইত্যাদি মানবিক প্রয়োজনসমূহ ছাড়া এখান থেকে বের হবো না। রোযা এবং তারাবীহের ন্যায় এতেও মনের এক প্রিয় বস্ত্ত হাতছাড়া হয়ে যায়। অর্খাৎ, বলগাহীন চলাফেরা করা। এর মধ্যেও প্রদর্শনী হতে পারে না। কারণ, মানুষ কী জানে যে, মসজিদে বিশেষ কোন নিয়তে বসেছে, নাকি এমনিই এসেছে। সম্মুখের হাদীসে এর ফযীলত বর্ণিত হয়েছে।

১৮. হযরত আলী বিন হুসাইন (রাযিঃ) স্বীয় পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি রমাযান মাসে দশদিন এতেকাফ করবে, সে দু’টি হজ্জ ও দু’টি উমরার সমান সওয়াব হবে।

১৯. হযরত ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতেকাফকারীদের সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন-
‘এতেকাফকারী গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে এবং তারা এমন সওয়াব পায় যেমন কোন ব্যক্তি সমস্ত নেককাজ করছে।’ (মিশকাত, ইবনু মাজার উদ্ধৃতিতে)

এতেকাফের মধ্যে একটি ফযীলত এও রয়েছে যে, এতেকাফকারীকে মসজিদে অবস্থান করতে হয়। মসজিদে অবস্থান করার ফযীলত দ্বাদশ রুহে বর্ণিত হয়েছে। তবে মহিলারা ঘরেই নিজের নামায পড়ার জায়গায় এতেকাফ করবে।
এ সমস্ত ইবাদত যেদিন শেষ হয়, অর্থাৎ, ঈদের দিন- হাদীস শরীফে তারও ফযীলত এসেছে। যথা-

০. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে (দীর্ঘ একটি হাদীসে) বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-যখন ঈদের দিন হয়, তখন আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদেরকে ইরশাদ করেন- তারা আমার দেয়া ফরয আদায় করেছে। তারপর দু’আর উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। আমার মর্য্দা, মহত্ত্ব, দয়া ও বড়ত্বের শপথ! আমি অবশ্যই তাদের দু’আ কবুল করবো। তারপর ইরশাদ করেন- তোমরা ফিরে চলে যাও। তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি এবং তোমাদের পাপসমূহকে নেকী দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছি। অতএব তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে যায়। (মেশকাত, বাইহাকীর উদ্ধৃতিতে)
শেষের হাদীস দু’টি মেশকাত শরীফ থেকে এবং অবশিষ্টগুলো তারগীব গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: