শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

যে কারণে রমজান মাস মর্যাদাপূর্ণ

 প্রকাশিত: ০৯:১৫, ১৬ এপ্রিল ২০২১

যে কারণে রমজান মাস মর্যাদাপূর্ণ

  মর্যাদাপূর্ণ এই মাসে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য রেখেছেন অফুরন্ত নিয়ামত। তাই রমজান আসার আগেই আল্লাহর প্রিয় বান্দারা এই মাসকে স্বাগত জানানোর জন্য যথেষ্ট আগ্রহ নিয়ে দিন গুনতে থাকে। কারণ এ মাসের আমল অন্যান্য মাসের ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় জোগায়। নিম্নে ফজিলতপূর্ণ এই মাসের কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো—

কোরআন অবতীর্ণের মাস
এ মাসেই আল্লাহ তাআলা পূর্ণ পবিত্র কোরআন লাওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে অবতীর্ণ করেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ রমজানের পরিচয় ও গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে সর্বপ্রথম এই বৈশিষ্ট্যের কথাই উল্লেখ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘রমজান মাস, যে মাসে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যা মানুষের জন্য হিদায়াত এবং সুপথপ্রাপ্তির সুস্পষ্ট পথনির্দেশ আর হক-বাতিলের মধ্যে পার্থক্যকারী। সুতরাং তোমাদের যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন অবশ্যই এর রোজা রাখে...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)
সিয়াম ও কিয়ামের মাস
রমজানের প্রধান মূল দুটি আমল হচ্ছে, দিনের বেলায় রোজা রাখা এবং রাতের বেলায় কিয়াম তথা ২০ রাকাত তারাবির নামাজ জামাতে আদায় করা। রোজা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি; যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বনকারী মুত্তাকি-পরহেজগার হতে পারো...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

রাতের কিয়াম সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রাতে ঈমানসহ পুণ্যের আশায় রাত জেগে ইবাদত করে, তার আগের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৭)

ইবাদতের শক্তি জোগানোর মাস
রমজানের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে গোটা বছরের জন্য ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ৮৩৬৮)

রহমতের মাস
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।’ (বুখারি, হাদিস : ১৮৯৮)

জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং দোয়া কবুলের মাস
রমজানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ অনুগ্রহে এই মাসে অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, ...আর একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, হে কল্যাণের প্রত্যাশী, অগ্রসর হও, হে অকল্যাণের প্রার্থী, থেমে যাও। আর আল্লাহ তাআলা এ মাসের প্রতি রাতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দান করেন। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১৮৭৯৪)। অন্য হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে প্রতি ইফতারের সময় অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। প্রতি রাতেই তা হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৩)
 
লাইলাতুল কদরের মাস
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘লাইলাতুল কদর এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এ রাতে ফেরেশতারা ও রুহ (জিবরাইল আ.) তাঁদের পালনকর্তার আদেশক্রমে প্রত্যেক কল্যাণময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন। যে রাত পুরোটাই শান্তি, যা ফজর হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।’ (সুরা : কদর, আয়াত : ৩-৫)

রমজান এলেই আল্লাহর রাসুল (সা.) সাহাবাদের বলতেন, ‘তোমাদের কাছে এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে প্রকৃতপক্ষে সব কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৬৪৪)

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: