শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ৬ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ইসলাম

মসজিদ নির্মাণ করা

 প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১১ নভেম্বর ২০২০

মসজিদ নির্মাণ করা

উৎস:
ইসলাহী নেসাব: হায়াতুল মুসলিমীন
হাকীমুল উম্মত মুজাদ্দিদে মিল্লাত, মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (র:)

শ্রম দিয়ে বা অর্থ দিয়ে মসজিদ নির্মানের কাজে সহযোগিতা করা, মসজিদের জন্য জমি দেওয়া এবং ভাঙ্গা মসজিদ মেরামত করা এ সবই মসজিদ নির্মাণের অন্তর্ভুক্ত।

মসজিদে নামায পড়া, বিশেষত জামাআতের সাথে নামায আদায় করা, মসজিদ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, মসজিদের আদব রক্ষা করা, মসজিদের খেদমত করা এবং মসজিদে বেশী সময় অবস্থান করা এগুলো হলো মসজিদের হক।
মসজিদ নির্মাণ করা এবং তার হক আদায় করা সংক্রান্ত কিছু আয়াত ও হাদীস লিখছি।

১. আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘ঐ ব্যক্তির চেয়ে অধিক অত্যাচারী আর কে আছে, যে আল্লাহর মসজিদসমূহে আল্লাহর যিকির (ও ইবাদত) করতে বাধা দেয় এবং সেগুলো নষ্ট ও বিরান করতে চেষ্টা করে?’ (সূরা বাকারা-১১৪)

২. আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন-
‘(সত্যিকার অর্থে) মসজিদসমূহকে আবাদ রাখা তাদেরই কাজ, যারা আল্লাহর উপর এবং কিয়ামতের দিনের উপর ঈমান রাখে, নিয়মিতভাবে নামায আদায় করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কাউকে ভয় করে না, তাদের জন্যই অভিষ্ট লক্ষ্য (অর্থাৎ, জান্নাত ও নাজাত) প্রাপ্তির আশা (ও ওয়াদা) রয়েছে।’ (সূরা তাওবা-১৮)

ফায়দা: এ আয়াতে মসজিদ আবাদকারীদের জন্য ঈমান ও জান্নাতের সুসংবাদ রয়েছে।
হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘যখন তোমরা কোন লোককে মসজিদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে দেখো (অর্থাৎ, মসজিদের খেদমতের প্রতি খেয়াল রাখে, সেখানে বেশী সময় অবস্থান করে, জামাআতে নামায আদায় করে ইত্যাদি) তাহলে তোমরা তার ঈমানদার হওয়ার সাক্ষী দাও। কারণ, আল্লাহ তা্আলা ইরশাদ করেন-
(অর্থাৎ, উপরোক্ত আয়াত, যার তরজমা উপরে (পূর্বের আয়াতের তরজমায় লেখা হয়েছে) (মিশকাত, তিরমিযী, ইবনু মাজা, দারামী)

৩. আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন-
‘তারা (অর্থাৎ হেদায়েতপ্রাপ্ত লোকেরা) এ রকম ঘরসমূহে (গিয়ে ইবাদত-বন্দেগী করে) যেগুলোর আদব-সম্মান করার জন্য এবং সেগুলোতে আল্লাহর নামে যিকির করার জন্য হুকুম দেওয়া হয়েছে।’
(সূরা নূর-৩৬)
ফায়দা: এ আয়াতে ঘর দ্বারা মসজিদসমূহ উদ্দেশ্য।

হাদীসসমূহ-
১. হযরত উসমান (রাযিঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি কেবলমাত্র আল্লাহ তাআলাকে খুশী করার উদ্দেশ্যে (অন্য কোন মন্দ উদ্দেশ্য নয়) মসজিদ তৈরী করবে, আল্লাহ তাআলা জান্নাতে তার জন্য ঐ রকম একটি ঘর তৈরী করবেন।’ (বুখারী ও মুসলিম)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা বিশুদ্ধ নিয়তের গুরুত্বও জানা গেলো, তদুপরি নতুন মসজিদ নির্মাণ না করে নির্মিত মসজিদ মেরামত করার সওয়াবের কথাও জানা গেলো। কারণ, হযরত উসমান (রাযিঃ) মসজিদে নব্বী মেরামত করে এ হাদীস বর্ণনা করেছিলেন। তাছাড়া অন্যান্য হাদীস দ্বারাও এটা প্রমাণিত হয়।

যেমন, হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি কোন মসজিদ তৈরী করবে- চাই তা ‘কাতাত’ পাখির বাসার সমান হোক বা তার চেয়েও ছোট হোক-আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করবেন। (তৈরী করার মধ্যে অর্থ ব্যয় করা কিংবা পরিশ্রম করা উভয়টি অন্তর্ভুক্ত। যেমন কিনা জামউল ফাওয়াইদ গ্রন্থে রাযীন থেকে হযরত আবু সায়ীদ (রাযিঃ) এর বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নব্বী তৈরীর সময় নিজে কাঁচা ইট বহন করছিলেন) (ইবনু খুযাইমা ও ইবনু হিব্বান)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা নির্মাধীন মসজিদে চাঁদা দেওয়ার ফযীলত জানা গেলো। কারণ, পাখির বাসার সমান বানানোর অর্থ কেবল এই হতে পারে যে, পূর্ণ মসজিদ তৈরী করতে পারেনি, তবে মসজিদ তৈরীর কাজে অতি সামান্য অংশ নিয়েছে, যার ফলে এ অর্থ দিয়ে মসজিদের সামান্য অংশ তৈরী হয়েছে। উপরের হাদীসে উক্ত ‘জান্নাতে তার অনুরুপ ঘর তৈরী হবে’ এর দ্বারা একথা যেন মনে করা না হয় যে, এমতাবস্থায় পাখির বাসার সমান ঘর তৈরী করা হবে। কারণ, এ দৃষ্টান্তের অর্থ এই নয় যে, ছোট বড় হওয়ার দিক থেকে তার মত হবে। বরং এর অর্থ হলো, ঐ ব্যক্তির ইখলাস অনুপাতে ঘর তৈরী হবে। তবে তার দৈর্ঘ-প্রস্থ হবে অনেক বড়।

যেমন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য (জান্নাতে) একটি ঘর তৈরী করবেন, যা তার তুলনায় অনেক লম্বা ও চওড়া হবে। (আহমাদ)

২. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি ইবাদতের উদ্দেশ্যে হালাল মাল দ্বারা একটি ঘর (অর্থাৎ মসজিদ) তৈরী করবে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে মতি ও ইয়াকুত পাথরের ঘর তৈরী করবেন।’
(তাবরানী, আওসাত)
ফায়দা: এটিও মসজিদের আদব যে, তাতে হারাম মাল ব্যয় করবে না। তা হারাম টাকা পয়সা হোক, মাল-মশলা হোক, বা জমিন হোক। যেমন, কিছু লোকের এমন আগ্রহ থাকে যে, অন্য জমিদারের জমিতে তার অনুমতি ছাড়া মসজিদ তৈরী করে। তারপর সে বাধা দিলে লড়াই করার জন্য ও মরার জন্য তৈরী হয়ে যায় এবং একে ইসলামের পক্ষপাতিত্ব ও ইসলামের খেদমত মনে করে। বিশেষত: জমিদার অমুসলিম হলে তো একে ইসলাম কুফরীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা মনে করে। খুব ভালো করে বুঝে নাও, এ জমিতে যে মসজিদ তৈরী করা হবে শরীয়তের দৃষ্টিতে তা মসজিদই নয়। তবে জমিদারের সম্মতিতে নিজেদের মালিকানাভুক্ত করে তারপর তাতে মসজিদ তৈরী করবে।

৩. হযরত আবু সায়ীদ (রাযিঃ) থেকে বর্নিত আছে যে, একজন নিগ্রো মহিলা ছিলো। (সম্ভবত: ইথিওপিয়ান ছিলো)। সে মসজিদ ঝাড়ু দিতো। এক রাতে সে মারা যায়। সকালবেলা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানানো হলো, তখন তিনি ইরশাদ করেন- তোমরা আমাকে (রাতে) জানাওনি কেন? তারপর তিনি সাহাবীদেরকে সঙ্গে নিয়ে বের হলেন এবং তার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তার উপর তাকবীর পড়লেন। (অর্থাৎ, জানাযা নামায পড়লেন) এবং তার জন্য দু’আ করলেন, তারপর ফিরে এলেন। (ইবনু মাজা, ইবনু খুযাইমা)
অপর একটি বর্ণনায় আছে যে, তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন-‘তুমি কোন আমলকে অধিক ফযীলতের পেয়েছো?’ সে উত্তর দিল যে, মসজিদ ঝাড়ু দেওয়াকে।’ (আবুশ শাইখ ইস্পাহানী)

ফায়দা: লক্ষ্য করুন! মসজিদ ঝাড়ু দেওয়ার বদৌলতে একটি অখ্যাত দরিদ্র ইথিওপিয়ান মহিলা- যার অখ্যাতি ও দরিদ্রতার কারণে তার মৃত্যু সংবাদও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অবহিত করা হয়নি- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কত বেশী মূল্যায়ন করলেন। তাঁর মৃত্যু সংবাদ না দেওয়ার জন্য অভিযোগ করলেন। তারপর তার কবরে গিয়ে জানাযা নামায পড়লেন। কবরের উপর জানাযা নামায পড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বৈশিষ্ট্য ছিলো। এবং তার জন্য দু’আ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করায় সে নিজে এ আমলের কত বড় ফযীলত বর্ণনা করলো। আফসোস! এখন মসজিদে ঝাড়ু দেওয়াকে মানুষ দোষ ও অপমানের কাজ মনে করে।

৪. হযরত আবু কুরসফা (রাযিঃ) থেকে দীর্ঘ একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘মসজিদ থেকে ময়লা-আবর্জনা বের করে ফেলা ডাগর চক্ষুবিশিষ্ট হুরদের মহর।’
(তাবরানী, কাবীর)
৫. হযরত আবু সায়ীদ খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে এমন জিনিস বাইরে ফেলবে, যার দ্বারা কষ্ট হয় (যেমনঃ আবর্জনা, কাঁটা, মূল মেঝের অতিরিক্ত পাথর) আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করবেন।’ (ইবনু মাজা)

৬. হযরত আয়েশা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে মহল্লায় মহল্লায় মসজিদ তৈরী করার এবং সেগুলোকে পাক-পরিষ্কার ‍সুরভিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।’
(আহমাদ, তিরমিযী, আবু দাউদ, ইবনু মাজা, ইবনু খুয়াইমা)
ফায়দা: পাক রাখার অর্থ এই যে, তার মধ্যে কোন নাপাক মানুষ, নাপাক কাপড় বা নাপাক তেল ইত্যাদি যেন যেতে না পারে। আর পরিষ্কার রাখার অর্থ এই যে, তার ময়লা-আবর্জনা বের করে ফেলবে।

৭. হযরত ওয়াসেলা বিন আসকা (রাযিঃ) থেকে দীর্ঘ একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন- মসজিদসমূহকে প্রতি জুমুআর দিন (সুগন্ধির) ধূপ দাও। (ইবনু মাজা, কাবীর, তাবরানী)

ফায়দা: মসজিদে সুগন্ধি দেওয়া জুমুআর দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তবে জুমুআর দিনের বৈশিষ্ট্য এই যে, ঐ দিন নামাযী বেশী হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লোক হয়ে থাকে। তাই মাঝে মাঝে ধোঁয়া দেওয়া অথবা অন্য কোনভাবে সুগন্ধি লাগানো কিংবা ছিটিয়ে দেওয়া উচিত।

৮. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-‘যখন তোমরা কাউকে মসজিদের মধ্যে বেচাকেনা করতে দেখবে, তখন বলবে যে, আল্লাহ তাআলা তোমার ব্যবসা লাভ না দিক। আর যখন কোন ব্যক্তিকে দেখবে যে, সে তার হারানো জিনিস (-এর কথা) মসজিদের মধ্যে জোরে জোরে তালাশ (ঘোষণা) করছে, তখন বলবে যে, আল্লাহ তাআলা তোমার নিকট তা ফিরিয়ে না দিক।’ (তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু খুযাইমা, হাকীম)

অপর একটি রেওয়ায়াতে এও রয়েছে যে, মসজিদসমূহকে এ সমস্ত কাজের জন্য তৈরী করা হয়নি। (মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনু মাজা)

ফায়দা: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- মসজিদের মধ্যে এমন জিনিস তালাশ করা, যা মসজিদের বাইরে হারিয়ে গেছে। মসজিদের মধ্যে এজন্য জোরে জোরে তালাশ (ঘোষণা) করছে যে, এখানে বহু মানূষের সমাগম হয়েছে। হয়তো কেউ সন্ধান দিবে। আর এরুপ বদ’দুআ দেওয়ার উদ্দেশ্য তাকে সতর্ক করা। তবে এতে লড়াই, ঝগড়ার ভয় হলে মনে মনে বলবে। এ হাদীসে মসজিদের অভ্যন্তরীন আদব উল্লেখিত হয়েছে। অর্থাৎ, সেখানে দুনিয়ার কাজ করবে না।

৯. হযরত ইবনু উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘এমন কিছু বিষয় রয়েছে, যেগুলো মসজিদের মধ্যে করা সমীচীন নয়-

১. মসজিদকে পথ বানাবে না। (যেমন কিছু লোক আছে, যারা ঘোরাপথ থেকে বাঁচার জন্য মসজিদের ভিতর দিয়ে গিয়ে অপর দিক দিয়ে বের হয়ে যায়।)
২. তার মধ্যে অস্ত্র বের করবে না।
৩. ধনুকে তীর জোতবে না।
৪. তীর ছড়িয়ে রাখবে না, (যেন কারো দেহে না বিঁধে)।
৫. তার মধ্য দিয়ে কাঁচা গোশত নিয়ে যাবে না।
৬. মসজিদের ভেতরে কাউকে শাস্তি দিবে না।
৭. মসজিদে কারো থেকে প্রতিশোধ নিবে না। (যাকে শরীয়তে ‘হদ্দ’ ও ‘কেসাস’ বলে)
৮. তাকে বাজার বানাবে না। (ইবনু মাজা)

১০. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘সত্বরই শেষ যুগে এমন সব লোক হবে, যারা মসজিদের মধ্যে কথা বলবে। আল্লাহ তাআলা তাদের কোন পরোয়া করবেন না। (অর্থাৎ, তাদের প্রতি সন্ত্তষ্ট হবেন না।)
(ইবনে হিব্বান)
ফায়দা: মসজিদে দুনিয়ার কথা বলাই বেয়াদবী।

১১. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি জামাআতের উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে রওয়ানা করে, তার এক কদমে একটি করে গুনাহ মাফ হয় এবং অন্য কদমে একটি করে নেকী লেখা হয়। যাওয়ার পথেও এবং আসার পথেও।’ (আহমাদ, তাবরানী, ইবনে হিব্বান)

ফায়দা: আল্লাহ তাআলার কত বড় রহমত। যাওয়ার পথে তো সওয়াব পাওয়াই যায়। আসার পথেও একই সমান সওয়াব পাওয়া যায়।

১২. হযরত আবুদ দারদা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে মসজিদের দিকে যায়। কিয়ামতের দিন সে আল্লাহর সঙ্গে নূরসহ মিলিত হবে।’ (তাবরানী)

১৩. হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছি-
‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর ছায়ায় স্থান দিবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ভিন্ন অন্য কোন ছায়া থাকবে না- তাদের মধ্যে এক ব্যক্তি সেও, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে।’ (বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য)

১৪. হযরত আনাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘তোমরা এ সমস্ত দুর্গন্ধযুক্ত সবজী (অর্থাৎ, পিঁয়াজ, রসুন যেমন, অন্যান্য হাদীসে এসেছে) খেয়ে আমাদের মসজিদসমূহে এসো না। যদি তোমাদের এগুলো খাওয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে এগুলোকে (এর দুর্গন্ধকে) আগুন দ্বারা শেষ করে দাও অর্থাৎ, রান্না করে খাও, কাঁচা খেয়ে মসজিদে এসো না।’ (তাবরানী)

১৫. হযরত আবু উমামা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ননা করেন- তিনি বলেন-
‘যে ব্যক্তি মসজিদে যায়, আর তার উদ্দেশ্য কেবল কোন ভালো কথা (অর্থাৎ, দ্বীনের কথা) শেখা বা শেখানো হয়, সে পূর্ণ হজ্জকারীর সওয়াব পায়।’ (তাবরানী)

ফায়দা: এ হাদীস দ্বারা জানা গেলো যে, মসজিদ যেমন নামাযের জন্য, তেমন ইলমে দ্বীন শেখা ও শেখানোর জন্যও। তাই মসজিদে এমন লোক থাকা উচিত, যে দ্বীনের কথা শিক্ষা দিবে। এ হাদীসগুলো তারগীব কিতাব থেকে সংগৃহীত। দু’টি হাদীস ছাড়া, সে দু’টিতে মেশকাত ও জামউল ফাওয়াইদের নাম লিখে দিয়েছি।

করণীয়: উপরোক্ত আয়াত ও হাদীসসমূহ দ্বারা যে সমস্ত করণীয় প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলো এই-

ক. প্রত্যেক ছোট-বড় জনবসতিতে সেখানকার প্রয়োজন অনুপাতে মসজিদ বানানো উচিত।
খ. মসজিদ হালাল মাল দ্বারা এবং হালাল জমিনে হতে হবে।
গ. মসজিদের আদব রক্ষা করবে। অর্থাৎ, পাক-পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখবে, ঝাড়ু দিবে, তার প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। দুর্গন্ধময় বস্ত্ত যেমন তামাক ইত্যাদি খেয়ে বা নিয়ে মসজিদে যাবে না। সেখানে দুনিয়ার কোন কাজ করবে না বা কথা বলবে না।
ঘ. পুরুষদের জন্য মসজিদে নামায পড়া উচিত। মারাত্মক সমস্যা ছাড়া জামাআত ত্যাগ করা উচিত নয়। মসজিদে এবং জামাআতে নামায পড়ার একটি ফায়দা এও রয়েছে যে, পরস্পরে সম্পর্ক মজবুত হয়। পরস্পরের অবস্থা জানা থাকে, ‘মুয়াত্তায়ে মালেক’ কিতাবের নিম্নোক্ত হাদীস দ্বারাও একথা প্রমাণিত হয়।

একবার হযরত উমর (রাযিঃ) সুলায়মান বিন আবু খায়সামাকে ফজরের নামাযে পেলেন না। হযরত উমর (রাযিঃ) বাজারে গমন করলেন। সুলায়মানের বাড়ী ছিলো মসজিদ ও বাজারের মাঝে। তিনি সুলায়মানের মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি সুলায়মানকে ফজর নামাযে দেখলাম না…’ এ হাদীসের ব্যাখ্যায় উলামায়ে কেরাম এ ফায়দাটিও উল্লেখ করেছেন।
ঙ. মসজিদে এমন ব্যক্তিকে (ইমাম বা শিক্ষক হিসেবে) রাখবে, যে সেখানকার অধিবাসীদেরকে মাসআলা-মাসায়েল শিক্ষা দিবে।
চ. অবসর পেলে মসজিদে গিয়ে বসে থাকবে। সেখানে দ্বীনের কাজ বা কথায় লিপ্ত থাকবে। সমস্ত মানুষ যদি নিয়মিতভাবে এর উপর আমল করে তাহলে সওয়াব ছাড়াও জামাআতও বড় হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: বিভিন্ন হাদীসে পরিষ্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, মহিলাদের জন্য ঘরে নামায পড়া মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে অধিক সওয়াব।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: