বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৈশাখ ১১ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

লাইফস্টাইল

নিম্ন আয়ের মানুষ বড় দুর্দিনে

 প্রকাশিত: ১২:২১, ২০ এপ্রিল ২০২১

নিম্ন আয়ের মানুষ বড় দুর্দিনে

রাজধানীতে ১৮ বছর ধরে রিকশা চালান দ্বীপজেলা ভোলার শামসুল আলম। কিন্তু এত বেকায়দায় আগে কখনও পড়েননি। সংসারের খাওয়া-পরা, দুই ছেলে ও এক মেয়ের লেখাপড়ার খরচ- সবই জোটে তার রিকশা চালিয়ে। তবে লকডাউন ঘোষণার পর তার আয় পাঁচ ভাগের এক ভাগে নেমে এসেছে। হিমশিম খেতে হচ্ছে তার দিন চালাতে। রাজধানীর সব নিম্ন আয়ের মানুষের এখন এমন অবস্থা। বড় দুর্দিন এখন তাদের।

শামসুল আলম গতকাল সমকালকে বলেন, ছয় দিন ধরে ২০০ টাকার বেশি আয় করতে পারছেন না। অথচ আর সব রমজানে আধাবেলা রিকশা চালালেই ৭০০ টাকা আয় করা যেত। কারণ রমজান মাসে মানুষজন হাঁটাহাঁটি কম করে। তাই রিকশার যাত্রী বেড়ে যায়। এবার যাত্রীই পাওয়া দুস্কর। সংসারের খরচই তুলতে পারছেন না তিনি।

একই অবস্থা পান-সিগারেট বিক্রেতা আল আমিনের। রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ঘুরে ঘুরে বেচাকেনা করেন তিনি। আগে বেচাকেনার পর গড়ে দৈনিক আয় হতো ৫০০ টাকা। গত কয়েক দিনের লকডাউনে বেচাকেনাই হচ্ছে ৫০০ টাকা, আয় হচ্ছে দৈনিক সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। এ দিয়ে দিনের থাকা-খাওয়ার খরচই হচ্ছে না। গতকাল আল আমিন বলেন, মানুষজন বাইরে বের হন কম। যারা বের হন, তাদের অনেকেই রোজাদার। তাই বেচাকেনা একদম কমে গেছে। চায়ের দোকানদার বাবুলও জানালেন, বেচাকেনা নেই।

রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মার পাশে বসে ভিক্ষা করেন ফরিদপুরের কাউলিকান্দার প্রতিবন্ধী এসকেন সরদার। তিনি জানালেন, রমজান মাসে মানুষ বেশি দান করায় আয়ও হতো বেশি। কিন্তু এবার প্রথম রমজান থেকেই লকডাউন। মানুষজন নেই রাস্তায়। তাই ভিক্ষাও পাচ্ছেন না। ইফতারের আগে কেউ কেউ খাবার-দাবার দেয়, তা দিয়েই দিন পার করতে হচ্ছে তাকে।

শামসুল আলম, আল আমিন, বাবুল, এসকেনের মতোই দুরবস্থা দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল অন্যান্য মানুষেরও। লকডাউনে অনানুষ্ঠানিক খাতের দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল মানুষের আয় কমেছে। কারও কারও আয় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেককে প্রয়োজনীয় খাবারের জন্য ঋণ করতে হচ্ছে অথবা আত্মীয়-পরিজনের সহায়তা নিতে হচ্ছে। অনেকে সামাজিক সহায়তার জন্যও হাত বাড়াচ্ছেন। তবে সবাই ঋণ বা সহায়তা পাচ্ছেন না। গতবছর সাধারণ ছুটির সময় বিত্তবান ব্যক্তি, বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থা সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এলেও এবার তেমন দেখা যাচ্ছে না।

করোনার প্রথম ঢেউয়ের প্রভাব কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ঢেউ। গত বছরের ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই এখনও বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। ওই সময় দেশে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছিল। নিম্ন আয়ের মানুষ যখন সেই ধাক্কা সামলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, তখনই শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ।

 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: