বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, চৈত্র ১৪ ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫

ইসলাম

অপরাধ দমনে তাকওয়ার গুরুত্ব

ফারুক আজমের ভাষান্তর

 প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৯ নভেম্বর ২০২০

অপরাধ দমনে তাকওয়ার গুরুত্ব

মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি দিন দিন কমে যাচ্ছে, তাই স্বাভাবিকভাবেই কমে যাচ্ছে আল্লাহভীতি। ফলে সমাজে বেড়ে যাচ্ছে অপরাধপ্রবণতা। খুন-খারাবি, ধর্ষণ, চুরি-ছিনতাই, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ সব ধরনের অপরাধ যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে উঠছে। মানুষ ভুলেই যাচ্ছে যে তাকে মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি কাজের হিসাব দিতে হবে। পাপ কাজ থেকে দূরে থাকা তো দূরের কথা, এখন পাপ করা, মানুষের ওপর জুলুম করতে পারাই যেন গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে। নিজেকে প্রভাবশালী হিসেবে প্রমাণ করতে যেন এর বিকল্প নেই। অথচ পবিত্র কোরআনে এমন জালিমদের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির বার্তা এসেছে। বর্ণিত হয়েছে—‘আর কতই না উত্তম হতো, যদি জালিমরা পার্থিব শাস্তি দেখে উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধু আল্লাহর জন্যই, আর নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রয়োগে অত্যন্ত কঠোর।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৬৫)

অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, এ ধরনের লোকদের কাছে শিক্ষিত বা সম্মানিত লোকেরা জিম্মি। মানসম্মান নিয়ে বাঁচতে সবার তাদের সম্মান করতে হয়। তাদের মন রক্ষা করে চলার চেষ্টা করতে হয়। কখনো কখনো সমাজের অনেক পবিত্র পদবিতেও এদের বসাতে হয়। অন্যের ওপর জুলুম করে এভাবে মিথ্যা সম্মান অর্জন করে প্রকৃত সম্মানিত হওয়া যায় না। রাসুল (সা.) এ ধরনের মানুষদের নিকৃষ্ট মানুষ বলেছেন।

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি চাইল। তিনি বলেন, তাকে অনুমতি দাও। সে তার বংশের নিকৃষ্ট সন্তান। অথবা বলেন, সে তার গোত্রের ঘৃণ্যতম ভাই। যখন সে প্রবেশ করল, তখন তিনি তার সঙ্গে নম্রভাবে কথাবার্তা বলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এর ব্যাপারে যা বলার তা বলেছেন। এখন আপনি তার সঙ্গে নম্রভাবে কথা বললেন। তিনি বলেন, হে আয়েশা! আল্লাহর কাছে মর্যাদায় নিকৃষ্ট সেই ব্যক্তি, যার অশালীন ব্যবহার থেকে বেঁচে থাকার জন্য মানুষ তার সংসর্গ বর্জন করে চলে। (বুখারি, হাদিস : ৬১৩১)

মহান আল্লাহ এ ধরনের কাজ করতে যেমন নিষেধ করেছেন, এ ধরনের লোকের সঙ্গে উঠবস করতেও নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তুমি আনুগত্য কোরো না এমন ব্যক্তির, যে অধিক কসমকারী, লাঞ্ছিত। পেছনে নিন্দাকারী ও যে চোগলখুরি করে বেড়ায়। ভালো কাজে বাধা দানকারী, সীমা লঙ্ঘনকারী, পাপিষ্ঠ। দুষ্ট প্রকৃতির, তা ছাড়া নীচু বংশীয় (কোনো কোনো অনুবাদে ‘জানিম’-এর অর্থ ‘নীচু বংশীয়’-এর স্থলে ‘জারজ’ও করা হয়েছে)।’ (সুরা : কালাম,   আয়াত : ১০-১৩)

হারিস ইবনে ওয়াহাব খুযাঈ (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.) বলতে শুনেছি, আমি কি তোমাদের জান্নাতি লোকদের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল এবং অসহায়; কিন্তু তারা যদি কোনো ব্যাপারে আল্লাহর নামে কসম করে বসেন, তাহলে তা পূরণ করে দেন। আমি কি তোমাদের জাহান্নামি লোকদের পরিচয় বলব না? তারা রূঢ় স্বভাব, অধিক মোটা এবং অহংকারী তারাই জাহান্নামি। (বুখারি, হাদিস : ৪৯১৮)

তাই যারা আল্লাহকে ভয় করে তারা কখনই এ ধরনের স্বভাব অর্জন করবে না। এমন কোনো কাজ করবে না, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে ঘৃণিত হতে হয়। জাহান্নামিদের তালিকায় নিজের নাম লেখাতে হয়। তা ছাড়া তারা জানে যে, মজলুমের ফরিয়াদ আল্লাহর কাছে খুব দ্রুত পৌঁছে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তুমি মজলুমের ফরিয়াদকে ভয় করবে। কেননা তার ফরিয়াদ এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না। (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৮)

তাই কেউ যদি সত্যিই মর্যাদাসম্পন্ন হতে চায় তাদের উচিত তাকওয়া অর্জন করা। সব ধরনের পাপ থেকে তাওবা করা। কারণ আল্লাহর কাছে তাকাওয়া অবলম্বনকারীরাই অধিক সম্মানের অধিকারী। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সে-ই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয়ই আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১৩)

আর যখন মানুষ তাকওয়া অর্জনে সক্ষম হবে, তখন তারা সব পাপ থেকে ফিরে আসবে। অন্যকে সম্মান করবে। অসহায়দের পাশে দাঁড়াবে। ফলে আমাদের সমাজটা হয়ে উঠবে সুন্দর ও সুখময়।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ মুত্তাকি হওয়ার তাওফিক দান করুন।আমিন। 
 

অনলাইন নিউজ পোর্টাল

মন্তব্য করুন: